শেরপুর ডায়াবেটিক সমিতির উদ্যোগে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপকডা. মো. ইব্রাহিমের ৩৪তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে শেরপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা, দোওয়া মাহফিল ও দুঃস্থ্য ডায়াবেটিস রোগীদের মাঝে সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন এবং উপকারভোগীদের মাঝে ঋণ বিতরণের অর্থ তুলে দেন। শেরপুর ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি সমাজসেবী রাজিয়া সামাদ ডালিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন ঠান্ডু। বিশেষ অতিথি হিেেসব বক্তব্য রাখেন, ময়মনসিয়হ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা হাসপাতালের কনসালট্যান্ট সার্জনডা. মো. মিজানুর রহমান, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাডা. মো. মোবারক হোসেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সালেহ মো. নুরুল ইসলাম হিরো, ডায়াবেটিক সমিতির পরিচালনা কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াদুর অদু, শেরপুর প্রেসক্লাব সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু, সাংবাদিক হাকিম বাবুল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপকডা. মো. ইব্রাহিমের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করাহয়। যেখানে বলা হয়, ডা. ইব্রহিীম ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। যার কর্মের ফসল বাংলাদেশ ডায়াবেটি কসমিতি, বারডেম। যিনি ডায়াবেটিক চিকিৎসায় দেশে বিপ্লব সাধন করেছেন। তিনি বলতেন, চরিত্রে সরলতা, শৃঙ্খলাবোধ আর অধ্যবসায় থাকলে আদর্শাবস্থা বাস্তবায়িত হতে বাধ্য। কর্মজীবনে যিনি কঠোর পরিশ্রমী, নিয়ামনুবর্তী, উচ্চাকাঙ্খিল, সৎ এবং কর্তব্যপরায়ন তিনিই হবেন সৌভাগ্যের বরপুত্র। যার প্রমান তিনি জীবদ্দশায় রেখে গেছেন। পরে দোয়া পরিচালনা করেন শেডাস পরিচালনা কমিটির সদস্য মাওলানা মো. শরাফত আলী।
শেরপুর ডায়াবেটিক সমিতির (শেডাস) সভাপতি সমাজসেবী রাজিয়া সামাদ ডালিয়া জানান, সারাদেশে ডায়াবেটিক সমিতিগুলো যা পারেনি, আমরা শেরপুরে সেটা করতে পেরেছি। ২৫ বছর পেরিয়ে আসা শেডাস দুঃস্থ্য রোগীদের বিনামুল্যে চিকিৎসাসেবা ও ইনসুলিন প্রদানসহ তাদের জীবন মানউন্নয়নে দরিদ্র রোগী সহায়তা তহবিল চালু করেছে। যার মাধ্যমে প্রতি বছর দরিদ্র অসহায় রোগীদের সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ করে আসছে। এ ঋণ আদায়ের হার শতভাগ, যা একটি বিরল রেকর্ড। ঋণ গ্রহণের প্রথম ২ মাস কোন কিস্তি দতে হয়না। তারপর থেকে ২ বৎসর মেয়াদে সাপ্তাহিক কিস্তি শুরু হয়। তবে কোন রোগী মারা গেলে তার ঋণ মওকুফ করাহয়। প্রায় ২৩ বছর ধরে আমরা সেটি করে আসছি। এদিন তালিকাভুক্ত ৪২ জন দরিদ্র রোগীকে ১০ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুর্ণায়মান তহবিলের আওতায় প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করা হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন ঠান্ডু বলেন, শেরপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে এখন আউটডোরে ডায়াবেটিস চিকিৎসার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ডায়াগনোস্টিক পরীক্ষা এবং চোখ, দাঁত ও ফিজিওথেরাপির আলাদা বিভাগ রয়েছে। শীঘ্রই ১০ শয্যার একটি ইনডোর হাসপাতাল সেবা চালু করা হবে। শিশু এবং দুঃস্থ্য ডায়াবেটিক রোগীদের আমরা বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। তিনি বলেন, আমাদের স্বপ্ন রয়েছে শেরপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালটিকে একটি মেডিকেল কলেজে রূপান্তর করা। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সালেহ মো. নুরুল ইসলাম হিরো এবং আব্দুল ওয়াদুর অদু তাদের বক্তব্যে ডায়াবেটিক হাসপাতালের জন্য অনুদান হিসেবে ৫ হাজার টাকা করে প্রদানের ঘোষণা দেন।
জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আলখায়রুম তার বক্তব্যে শেরপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, আমার তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তিনি ডায়াবেটিক হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।