সারাদেশের ন্যায় শেরপুরেও চামড়ার বাজার মন্দা থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা । সেই সাথে শেরপুরের কওমী মাদ্রাসা গুলোর আর্থিক আয়ের অন্যতম উৎস কোরবানীর ঈদে অনুদান হিসেবে পাওয়া চামড়া বিক্রি থেকে আয়ও কমে গেছে চামড়ার বাজার মন্দা থাকার ফলে। এই ঈদে পাইকারী বাজারে পশুর চামড়ার দাম হঠাৎ করেই কমে যাওয়ায় এতে অনুদান হিসেবে পাওয়া চামড়ার দাম না পেলে আর্থিক সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা মনে করেন , এবার চামড়ার বাজারে মন্দা ভাব থাকায় কয়েকশ’ ক্ষুদে মৌসুমী ও খুচরা চামড়া ব্যবসায়ীর মধ্যে কেউ কেউ লাভবান হলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ীর বিপুল অংকের টাকা লোকসান গুণতে হবে ।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত বারের চেয়ে এবছর রকমভেদে সব ধরনের পশুর চামড়া দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ কম দামে কেনাবেচা হয়েছে। ঈদের দিন প্রথমভাগে মৌসুমী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা একটু বেশি দামে চামড়া কিনলেও দিনের শেষভাগে চামড়ার দাম ব্যাপকভাবে পড়ে যায়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কিছুটা বেশি দরে চামড়া কেনাবেচা করতে দেখা গেলেও শহর এলাকার অবস্থা ছিল একেবারেই বিপরীত।
চামড়ার পাইকারী বাজারে একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এবছর কুরবানির গরুর চামড়া প্রতিটি ৮শ’ টাকা থেকে ৯শ’ টাকার মধ্যে কিনছেন।
শেরপুরের একাধিক কওমী ও এতিমখানা মাদরাসা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, চামড়ার বাজার ধসের কারণে তাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
শেরপুরের অন্যতম কওমী মাদ্রাসা জামিয়া সিদ্দিকীয়া তেরাবাজার মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা সিদ্দিক আহাম্মেদ শেরপুর টাইমসকে বলেন, এবছর আমরা তিন শতাধিক চামড়া অনুদান হিসেবে পেয়েছি। তিনি বলেন, ‘আমাদের মাদরাসা এলাকাবাসীর অনুদানে চলে থাকে। আর অনুদানের বড় অংশ পেয়ে থাকি চামড়ার দান থেকে। কিন্তু চামড়ার দামের যে অবস্থা, তাতে করে প্রতিষ্ঠান চালানো আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।’ তাই সরকারের কাছে দাবী চামড়ার বাজার যেন সঠিক থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখার ।
এ ব্যাপারে ইত্তেফাকুল উলামা শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আব্দুল আজীজ বলেন ‘কওমী প্রতিষ্ঠানে বেশির ভাগ এতিম শিশুরা পড়াশোনা করে। প্রতি বছর কুরবানি ঈদ আসলে চামড়ার বড় একটা কালেকশন করে থাকি। এবারো মানুষ আমাদের চামড়া দিয়েছে, তবে বাজারের অবস্থা খুব খারাপ।’ যদি সদাশয় সরকার এদিকে একটু খেয়াল করেন তবে এই এতিম শিশুরা ভাল ভাবে ধর্মীয় পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে পারবে।
উল্লেখ্য যে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বছর ঈদুল আযহায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া দাম (ঢাকায়) ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, খাসি ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরি ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করে।
গত বছরের চেয়ে দাম কম উল্লেখ করে সরকারের চামড়ার দাম কমানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ঈদের আগেই এক সংবাদ সম্মেলন করেছিল কওমী মাদ্রাসাগুলোর সংগঠন কওমী ফোরাম।