শেরপুরে চাঞ্চল্যকর কিশোর বিল্লাল (১২) হত্যা মামলায় ৩ কিশোরের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। দন্ডপ্রাপ্তরা হলো- ঝিনাইগাতীর গিলাগাছা গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে নূর হোসেন (১৬) শেরপুর পৌর শহরের শেরীপাড়া মহল্লার আব্দুর রশিদের ছেলে ছানুয়ার হোসেন ওরফে মান্নান (১৫) ও একই মহল্লার মৃত শাহাদতের ছেলে বিষু (১৯)
৯ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন আদালতে ওই রায় ঘোষনা করেন। দ-প্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ছানুয়ার হোসেন জামিন নেওয়ার পর পলাতক রয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, দন্ডপ্রাপ্ত ওই ৩ কিশোর রেষ্টুরেন্টে কাজ করার পাশাপাশি চোরদলের সদস্য ছিল। ২০১১ সালের ২৩ মে আসামী নূর হোসেন একটি মোবাইল চুরি করে তা বিক্রি করে। এসময় নবীনগর এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে রেষ্টুরেন্ট কর্মচারী শিশু বিল্লাল তা দেখে ফেলে এবং টাকার ভাগ চায় । কিন্তু নূর হোসেন তাকে টাকা দিতে অস্বীকার করে। পরদিন বিল্লাল কয়েকজনের সামনে নূর হোসেনকে চোর বলে গালি দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নূর হোসেন তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মাফিক ২৪ মে রাতে নূর হোসেন তাঁর সহযোগী ছানুয়ার ও বিষু শিশু বিল্লালকে ফুঁসলিয়ে সন্ধ্যে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সিনেমা দেখায়। পরে তাঁকে সদর উপজেলা বয়রা পরানপুর ভাটারাঘাট এলাকার মৃগী নদীর তীরে নিয়ে যায়। সেখানে ওই ৩ জন বিল্লালের পা বেঁধে গরুর ধারাল হাড় দিয়ে গলা ও পেট কেটে ফেলে। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে বিল্লালের মলদ্বারে লাঠি ঢুকিয়ে তাঁর নাড়িভ’ড়ি বের করে আনা হয়। পরে তাঁর লাশ একটি ট্রাংকের ভেতর ঢুকিয়ে মৃগী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।পরদিন জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে ওই ট্রাংকের সন্ধ্যান পায়। পরে পুলিশ এসে বিল্লালের লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই ৩ ঘাতককে গ্রেফতার করে এবং তাঁরা আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়। পরে সদর থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন বাদী হয়ে ওই ৩ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩১ আগষ্ট সদর থানার উপ-পরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমান আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
রায়ে বিচারক উল্লেখ করেন, পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩০০ ধারায় ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেও বয়স কম হওয়ায় মৃত্যুদন্ড প্রদান না করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
আসামী পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট আব্দুল মজিদ বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পাইনি । আইনজীবি হিসাবে দন্ডপ্রাপ্তদের অভিভাবক হিসাবে পরার্মশ দিয়েছি উচ্চ আদালতে যাওয়ার । আশা করি সেখান থেকে আমরা জামিন তথা খালাস পাব।
তবে এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন ঠান্ঠু বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। এ রায় শুনে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের নির্মম ও পৈশাচিক কায়দায় শিশু হত্যা করার সাহস পাবেনা।
খবরটির ভিডিও দেখুন : ক্লিক করুন