শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারতের মেঘালয় প্রদেশের সীমান্তঘেষা বারমারী সাধু লিওর খ্রীষ্ঠান ধর্মপল্লীতে আগামী ২৫ ও ২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার দু’দিন ব্যাপি তীর্থোৎসব উপলক্ষে সর্বত্র উৎসবের আমেজ বইছে। শুধু এই পাহাড়ি এলাকাতেই নয় বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এখন উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পহাড় এলাকার বারোমারী খ্রীষ্টান মিশনে তীর্থোৎসবকে ঘিরে ইতিমধ্যেই জোড় প্রস্তুতি শুরু হয়েছে । মিশনের বিভিন্ন স্থানের রাস্তা সংস্কার, আগাছা পরিস্কার, ধোয়া মোছা, প্যান্ডেল, প্রবেশ পথের গেইট তৈরীসহ বিভিন্ন প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মিশনের লোকজন।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ভক্তদের জন্য নির্মান করা হচ্ছে প্যান্ডেল ও রাত্রী যাপনের বিশেষ ব্যবস্থা। এছাড়া খাওয়া-দাওয়া’র জন্য সল্প মূল্যে খাওয়া-দাওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে তীর্থ কমিটি। এছাড়া বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ ও লেট্রিন এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিশেষ করে পাশ্ববর্তী ভারতের মেঘালয় প্রদেশ থেকে অসংখ্য গারো খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীরাও এ তীর্থে আসবেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে। ভারতের অনেক গারো খ্রীষ্টানদের শেরপুর সীমান্তে আত্মীয় স্বজন থাকায় প্রতি বছর এ তীর্থ উপলক্ষে ভারতের মেঘালয় থেকে অনেক আত্মীয়রা আসেন।
এবারের উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় বা মূল সুর নেয়া হয়েছে ‘ত্যাগ, সেবা ও প্রেমের রাণী ফাতেমা রাণী, মা মারিয়া’। এ মূল সুরের ভিত্তি করেই ধর্মীয় নানা আচার-আচরণ উদযাপন করা হবে। ইতিমধ্যে মিশনের পক্ষ থেকে তীর্থের দিন গীতি আলেখ্য ও অন্যান্য সঙ্গীত ও নৃত্যের প্রস্ততিও চলছে।
২৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেলে পাপ স্বীকারের মাধ্যমে শুরু হবে মূল ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এরপর পবিত্র খ্রীস্টযাগ এবং রাতে উৎসবের প্রধান আকর্ষন আলোক শোভাযাত্রা। মধ্যরাতে সাক্রান্তের আরাধনা, নিশি জাগরণ ও নিরাময় অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে প্রথম দিনের উৎসব শেষ হবে। পরদিন শুক্রবার সকাল ৮ টায় জীবন্ত ক্রুশের পথ ও সকাল ১০টায় মহা খ্রীস্টযাগের মাধ্যমে তীর্থোৎসবের সমাপ্তী হবে। এবারের তীর্থ উৎসবে প্রধান বক্তা থাকবেন রাজশাহী ধর্ম প্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও ডি ডি।
বারোমারী খ্রীষ্টান মিশনের ফাদার মনিন্দ্র এম চিরান জানায়, আমাদের তীর্থের সকল প্রস্ততি সম্পন্ন শেষ হয়েছে। এখন শুধু দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তীর্থ যাত্রীরা আসবেন এবং তীর্থের সকলকার্যাদি সম্পন্ন করবেন। এবার আশা করছি প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার তীর্থ যাত্রী আসবেন।
উল্লেখ্য, ১৯৪২ সালে প্রায় ৪২ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত বারমারী সাধু লিওর এ ধর্মপল্লীটি ১৯৯৮ সালে পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর আদলে ও অনুকরনে পাহাড় ঘেরা মনোরম পরিবেশে তৈরী হওয়ায় এটিকে বার্ষিক তীর্থ স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয়। এবার প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার খ্রীষ্ট ভক্ত অংশ গ্রহন করবে বলে আশা করছে তীর্থ আয়োজকরা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বিল্লাল হোসেন জানায়, তীর্থকে ঘিরে নিরাপত্তার জন্য র্যাব, বিজিবি’র টহলের পাশাপাশি আমাদের পুলিশের ২ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এসময় সার্বক্ষনিক ৩৮০ জন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া সাদা পোষাকে নিরাপত্তা কর্মীর পাশাপাশি সার্বক্ষনিক সিসি টিভি ক্যামেরা দ্বারাও নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং করা হবে।