জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মানকি গ্রামের ময়েজউদ্দিনের ছেলে মো. আব্দুল করিম (৫৫) একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সামান্য পুজি নিয়ে তিনি শেরপুর ও জামালপুর জেলার গ্রামের হাট থেকে মুরগী কিনে বাসা-বাড়ীতে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মুরগী কিনতে আসেন। কিন্তু এদিন বাজারে মুরগী না থাকায় মাত্র ৪০-৪৫টি মুরগী কিনে তিনি বাড়ীতে রওনা দেন। এসময় রাস্তায় চোর ডাকাতের ভয়ে একটি ছ্ট্টো ব্যাগের মধ্যে ৬২ হাজার ৭৫০ টাকা রেখে মুরগীর খাঁচায় রেখে দেন।
জামালপুর ব্রহ্মপুত্র ব্রীজে এসে তিনি ভ্যান থেকে খাঁচা নামিয়ে দেখতে পান তাঁর টাকার ব্যাগটি নেই। ওইস্থানে অনেক খোঁজাখুঁজি করে টাকার ব্যাগ না পেয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাঁর কান্না দেখে ব্রহ্মপুত্র সেতুতে টহলরত উপ-পরিদর্শক মো. হাসিবুল হাসান ও পুলিশ সদস্যরা তাঁর কাছে এসে ঘটনা জানতে পারেন। পরে তাঁকে টাকা উদ্ধারের আশ্বাস দিয়ে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
রাত দুইটা থেকে পুলিশ সদস্যরা শেরপুর-জামালপুর সড়কের ১২ কিলোমিটার সড়কে টাকা উদ্ধারে কাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে ভোর সাড়ে চারটার দিকে পোড়ার দোকান নামক স্থানে ওই টাকার ব্যাগটি রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
৪ আগষ্ট শুক্রবার দুপুরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. আব্দুল করিমকে মেলান্দহ থেকে খবর দিয়ে শেরপুর আনা হয়। পরে তাঁর হাতে হারিয়ে যাওয়া ৬২ হাজার ৭৫০ টাকা তুলে দেন ।
এসময় শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আলম সরকার, ডিবি ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার সহ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন ।
টাকার ব্যাগ হাতে পেয়ে অভিভ’ত আব্দুল করিম বলেন, আমি খুব গরীব ৬০-৭০ হাজার ট্যাহা পুজি নিয়া গ্রামে গ্রামে মুরগী বিক্রি কইরা সংসার চালাই। টাকা হারায়া আমি নিরুপায় হইয়া গেছিলাম। পুলিশ ভাইয়েরা আমার টাকা উদ্ধার কইরা আমার পরিবাররে রক্ষা করলো। আল্লাহ হেগরে ভাল করবো। পুলিশ এত ভাল কাজ করতাছে তা জানা ছিলনা।
টাকা উদ্ধারে নেতৃত্বদানকারী পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. হাসিবুল হাসান বলেন, টাকা উদ্ধার করে ওই ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দিতে পারায় পুলিশ সদস্য হিসেবে আমার খুব ভাল লাগছে। তিনি বলেন, ওইদিন টহলদলে থাকা প্রতিটি পুলিশ সদস্যের লক্ষ ছিল টাকা উদ্ধার করা। সারারাত রাস্তায় বেশ কয়েকটিস্থানে খুঁজে আমরা সফল হই। ভাল কাজ করতে পেরে তাঁরা সবাই আনন্দিত বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামছুল আলম সরকার বলেন , এসপি স্যারের নির্দেশে আমরা ক্ষুদ্র ওই ব্যবসায়ীকে টাকা গুলো ফেরত দিয়ে খুব ভাল লাগছে। ধন্যবাদ জানাই আমার সেই পুলিশ সদস্যদের । যারা লোভের উর্ধে থেকে এই কাজটি করতে পারছে।
এ ব্যাপারে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. রফিকুল হাসান গনি বলেন, দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ নিরলস কাজ করছে। তিনি বলেন, দায়িত্ব- কর্তব্য পালনে পুলিশ কখনো অবহেলা করেনা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর টাকা উদ্ধারের ঘটনাটি ছোট হলেও এটি আমাদের কর্মস্পৃহা আরও বাড়িয়ে দেবে। আমি টহল পুলিশের সকল সদস্যদের ধন্যবাদ জানাই।