শেরপুরে জমশেদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম রেজার বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানান অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগের সুষ্ঠ বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিনহাজ উদ্দিন মিনাল। সোমবার (২০ জুলাই) দুপুরে শেরপুর প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তিনি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে অপসারণসহ বিচার দাবি করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দুর্গম চরাঞ্চলের অবহেলিত এলাকায় শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে শেরপুর সদর উপজেলার কুসুমহাটিতে ২০০১ সালে পিতার নামে ওই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তার অভিযোগ, সম্প্রতি কলেজের ডিগ্রি পর্যায়ের ১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও নিয়ে অধ্যক্ষ শহিদুল জাল-জালিয়াতি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ চরম অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে তিনি মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৯ বছর যাবত নিয়মিত কর্মরত হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ শহীদুল্যাহকে বাদ দিয়ে শেখ জামাল নামে একজনকে, অচেনা ও অন্যত্র বেসরকারি চাকরিজীবী আজিবর রহমানকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে, নুরে আলমকে দর্শন বিভাগে ও বন্দনা চক্রবর্তীকে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে এমপিও’র ব্যবস্থা করেছেন। আর প্রায় একই সময় ধরে নিয়মিত কর্মরত অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোহাম্মদ মাসুদ আল হাসান ও খোকন মিয়া নামে আরও এক কর্মচারীকে বাদ দিয়ে আনোয়ার হোসেন নামে তার এক আত্মীয়সহ ২ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ ও এমপিওভূক্ত করেছেন। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মোঃ শহিদুল ইসলাম নামে একজনকে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে পদায়ন এবং সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রভাষক মোঃ আসাদুজ্জামানকে অবৈধ ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভাইস-প্রিন্সিপাল নিয়োগ দেখানো হয়েছে- যা তার (সভাপতির) সময়কালে কোনভাবেই সম্পন্ন হয়নি। ওইসব নিয়োগের ক্ষেত্রে তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। অন্যদিকে এমপিওবঞ্চিত শিক্ষক মোঃ শহীদুল্যাহ ও কর্মচারী মাসুদ আল হাসান এডহক কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্যদের লিখিত অভিযোগ দিয়েও তাদের কোন সাড়া পাননি। বরং জেলার শিক্ষার দায়িত্বে থাকা তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অভিযোগ পেয়েও ‘দেখছেন, দেখছেন’ বলে সময়ক্ষেপণ করেছেন বলেও অভিযোগে দাবি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর কলেজের গভর্নিং বডি বিলুপ্ত করে একটি প্রভাবশালী মহলের তদবিরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পত্রে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিকে বাদ দিয়ে জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে ৫ সদস্যের একটি এডহক কমিটি করা হয়। সেই কমিটিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্যকে রাখা হয়নি। ওই বিষয়ে দাতা সদস্যের এক সিভিল রিভিশন মামলায় ৯ মার্চ উচ্চ আদালতের এক আদেশে এডহক কমিটি ও তার কার্যক্রমের উপর স্থিতাবস্থা আরোপ করা হলেও সেই আদেশ উপেক্ষা করে ডিগ্রি পর্যায়ে যাচাই-বাছাই ব্যতীত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও তালিকা চূড়ান্তকরণ করা হয়েছে। এছাড়া অধ্যক্ষ রেজা তার নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার বিষয়ে জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে ১২ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হলেও তার পূর্ববর্তী কর্মস্থলের এমপিও থেকে এ কলেজে যোগদানের সময়কাল পর্যন্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে মাত্র ৬ বছর। তার ওই জালিয়াতির বিষয়ে কতিপয় শিক্ষক-কর্মচারীসহ গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়েরের প্রেক্ষিতে বিভাগীয় তদন্তে তার সত্যতা পাওয়ার পরও প্রভাবশালী মহলের তদবিরে তার বিরুদ্ধে আজও কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। কেবল তাই নয়, ওই বিষয়ে উচ্চ আদালতের একটি রিট পিটিশন দায়েরের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর ওই বিষয়ে রুল জারিসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি ১ মাসের মধ্যে আইন অনুযায়ী নিস্পত্তির নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও ওই মহলের তদবিরেই তা বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ওইসব দুর্নীতির অভিযোগ ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও শেরপুরের জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করে সাবেক সভাপতি মিনাল অভিযোগের দালিলিক কাগজপত্র উপস্থাপন করে ওই বিষয়ে দ্রুত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক অন্যায়ভাবে এমপিওবঞ্চিত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভূক্ত, অবৈধভাবে এমপিও হওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও বাতিলসাপেক্ষে অধ্যক্ষকে স্বীয় পদ থেকে অপসারণ এবং আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তাকে বিচারের মুখোমুখিকরণসহ কলেজের সার্বিক শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি জিএম আজফার বাবুল, সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আদিল মাহমুদ উজ্জলসহ স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।