শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য গৃহীত ‘বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মসূচীর টাকায় বিদ্যালয়ের উন্নয়ন না হয়ে লোপাট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পকেট ভারী হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষক ও মানেজিং কমিটির কতিপয় ব্যক্তির। ফলে স্কুলে আসতে শিশু শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করতে সরকারের যে উদ্যোগ তা চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলার তালুকপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে সবশেষ পরপর দুই অর্থ বছরের জন্য আসা ‘স্লিপ’ এর টাকা ইতিমধ্যেই উত্তোলন করা হয়ে গেছে। কিন্তু টাকা উত্তোলন, কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও এসএমসি’র সদস্যরা। শুধু তালুকপাড়াই নয়, এমন চিত্র অনেক বিদ্যালয়ের।
সূত্রমতে, শিশুদের স্কুলগামী করার লক্ষ্যে এ টাকায় বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক সজ্জিতকরণ, খেলাধূলার সরঞ্জাম ক্রয়, শিক্ষা উপকরণ ক্রয়, বিভিন্ন দিবস উদযাপন ইত্যাদি নানা খাতে ব্যয় করার কথা রয়েছে। বর্তমানে নালিতাবাড়ী উপজেলায় নতুন ও পুরনো মিলে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১২০টি। গেল ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে এসব বিদ্যালয়ে ‘বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মসূচী’ (স্লিপ) এর আওতায় ৪০ হাজার টাকা করে সর্বমোট ৪৮ লাখ টাকা প্রদান করে সরকার। কিন্তু অন্তত অর্ধেক বিদ্যালয়েই উন্নয়নের ৪০ হাজার টাকার সিংহভাগই ভুয়া প্রকল্প ও ভাউচার দিয়ে আত্মসাত করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকরা। রয়েছে সমুদয় টাকা আত্মসাতের ঘটনাও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বৃক্ষরোপন, মা সমাবেশ, নানা প্রকার আসবাবপত্র মেরামত ও ক্রয়, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং বিদ্যালয় ভবন সংস্কারসহ নানা ভুতুরে ভাউচারে এসব টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিও উক্ত টাকার ভাগ নিয়েছেন। অথচ পরিকল্পনা কমিটির সদস্য একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এমনকি এসএমসি’র সদস্যরাও এসব বিষয়ে কিছু জানেন না। খেলাধূলার কোন সরঞ্জামও কিনে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে বেশ কিছু বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীই।
তবে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে পরিকল্পনার বাইরে গিয়েও কিছু কাজ করে থাকেন বলে জানান, নয়াবিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এসএমসির সভাপতি আব্দুল গফুরসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
এদিকে, গেল ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের টাকার কাজ পুরোপুরি করা না হলেও কোনপ্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে ইতিমধ্যেই চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বরাদ্দ বিতরণ করা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এমন অবস্থাই চলে আসছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে জনমনে।
বিষয়টি সম্পর্কে নালিতাবাড়ী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আতাউর রহমান জানান, প্রকৃতপক্ষে যে উদ্দেশ্যে এ টাকা প্রদান করা হয়, তা পুরোপুরি কাজে লাগানো হয় না। তিনি আরও বলেন, জনবলের অভাবে তারা এসবের তদারকি করতে পারেন না। তবে দু-একটি স্কুলে গিয়ে মনিটরিং করে কাজ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বলে জানান এ কর্মকর্তা। অন্যান্য বিদ্যালয়েও কাজ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু নালিতাবাড়ী উপজেলা নয়, শেরপুর সদরসহ সবক’টি উপজেলার চিত্র প্রায় একই। এমতাবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দকৃত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।