দীর্ঘ দিনেও বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় প্রতি বছর অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এবার ঢলের পানিতে ঝিনাইগাতী বাজারসহ সাতটি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ওইসব গ্রামের অন্তত ১৫শ হেক্টর জমির আমন ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে কয়েক কোটি টাকার মাছ। বাজারে পানি উঠায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সার,লবণ ও চাল ব্যবসায়ী সহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও প্লাবিত হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ উপজেলা নির্বাচন অফিস,ডাকঘর, সাবরেজিস্ট্রার, নলকুড়া ভূমি কার্যালয় ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের চারপাশের এলাকা। অন্যদিকে বাঁধ সংস্কারের বিষয়টি দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার দিবাগত গভীর রাত থেকে ঝিনাইগাতীতে টানা বর্ষণ শুরু হয়। যা আজ শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত আছে। সেই সঙ্গে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবল বেগে মহারশি নদীর রামেরকুড়া এলাকার বেড়িবাঁধের পুরোনো ভাঙা অংশ দিয়ে ঝিনাইগাতী বাজারে প্রবেশ করে। এছাড়া সোমেশ্বরী ও কালঘেঁষা নদীর পানি উপচে উপজেলার ঝিনাইগাতী সদর, নলকুড়া, ধানশাইল, হাতিবান্ধা ও মালিঝিকান্দাসহ ৭টি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। সেই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও প্লাবিত হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ উপজেলা নির্বাচন অফিস, ডাকঘর, সাবরেজিস্ট্রার, নলকুড়া ভূমি কার্যালয় ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের চারপাশের এলাকা।
স্থানীয়রা মনে করেন, মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে এবারের এই ক্ষতি, তা দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা অবস্থায় আছে। এ বাঁধ সংস্কারে আগাম ব্যবস্থা নিলে এই ক্ষতি রোধ করা যেত।
এব্যাপারে ঝিনাইগাতী বাজারের ব্যাবসায়ী গোলাম মোস্তুফা জানান,পর পর দুই দফায় বন্যা এমনেতেই আমাদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে তার উপর আজকের আকর্ষিক পাহাড়ী ঢল আমাদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে । যা পুষিয়ে নেয়া সত্যিই আমাদের জন্য খুব কষ্টকর।
অন্য আরেক ব্যবসায়ী ফারুক আহম্মেদ জানান ,দ্রুত যদি মহারশি নদীর বেড়িবাধ সংস্কার করে শহর রক্ষা বাধ নির্মাণ না করা হয় তবে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে ও স্থানীয় সাংসদের কাছে দ্রুত শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করার দাবি জানায়
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আকস্মিক এ ঢলে সদর বাজারের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এলাকাবাসীর মধ্যে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি নেমে এসেছে।
এদিকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফয়জুন্নাহার বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৪ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে প্রায় ১৫শ’ হেক্টর জমির ধান নিমজ্জিত হয়েছে।
বেড়িবাঁধ সংস্কারের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জামালপুরের পাউবো কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা হচ্ছে বলে জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা করিম ।
যদিও ২০১৩ সালে রামেরকুড়া বেড়িবাঁধটি পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেলে তা সংস্কারের জন্য জামালপুরের পাউবো কর্তৃপক্ষ ৩২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও আজও তা আলোর মুখ দেখেনি।