দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে শেরপুরে চলছে জমজমাট প্রচারণা। শেরপুর জেলায় এবার নতুন ভোটার হয়েছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৩৭ জন। যা মোট ভোটারের প্রায় ১৫ শতাংশ। আর জেলায় তিনটি আসনেই ভোটের উৎসবে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে নতুন ও তরুণ ভোটাররা। এরই মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, তিনটি সংসদীয় আসনে প্রায় ১৭ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে শেরপুর জেলা গঠিত। সদর শেরপুর-১ আসন, নকলা-নালিতাবাড়ী নিয়ে গঠিত শেরপুর-২ আসন ও শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী নিয়ে গঠিত শেরপুর-৩ আসন। এরমধ্যে
শেরপুর-১ আসনের নতুন ভোটার ৬৫ হাজার ৫৬১ জন। আর এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৯ জন। শেরপুর-২ আসনের নতুন ভোটার ৬৩ হাজার ১৫২ জন। আর এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১২ হাজার ৩১০ জন। শেরপুর-৩ আসনের নতুন ভোটার ৫৭ হাজার ৬২৪ জন। আর এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৩ হাজার ১৪৪ জন। তিনটি আসনের মোট ভোটার ১২ লাখ ২২ হাজার ৩৯৩ জন। এরমধ্যে নতুন ভোটার হয়েছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৩৭ জন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নতুন ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বন্ধুবান্ধব নিয়ে বসছেন চায়ের দোকানে। চায়ের আড্ডার ছলে উঠে আসছে তাদের মনের আশা। তরুণদের ভাষ্য, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ করা হলে ভোট কেন্দ্রে যাবেন তারা। তরুণদের কর্মসংস্থান নিয়ে যারা কাজ করবে ও পাশাপাশি এলাকায় উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এমন সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেয়ার কথাও ভাবছেন নতুন ভোটাররা। ভোটে অংশ নেয়া দলগুলোর নজরও তাই এই তরুণ ভোটারদের দিকে।
নতুন ভোটার রবিউল আওয়াল পাপুল বলেন, প্রথমবার ভোটার হয়েছি। এক ধরনের উচ্ছাস কাজ করছে। আমাদের শেরপুরের উন্নয়ন নিয়ে যে কাজ করবে তাকেই ভোট দেব। আমরা চাই নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ।’
আরেক ভোটার শরিফ বলেন, ‘আমার প্রথম ভোট উৎসবমুখর পরিবেশে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ চাই। আমি শেরপুরে একটি মেডিক্যাল কলেজ চাই। আমাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা চাই। আমার জীবনের প্রথম ভোটটা আমি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকেই দিতে চাই।’
নতুন ভোটার নয়ন বলেন, ‘আমাদের শেরপুরে এক পেশে উন্নয়ন হয়েছে। আমরা চাই পুরো শেরপুর সমানভাগে উন্নয়ন হোক। আমরা শেরপুরে পরিবর্তন চাই। যাকে সবসময় আমাদের কাছে পাব। যাকে ভোট দিলে আমাদের এলাকার উন্নয়ন করবে, বিপদ-আপদে পাশে থাকবে, নতুন ভোটার হিসেবে তাকেই ভোটটা দেব।’
ভোটার ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমাদের শেরপুরে এখনও রেললাইন হয়নি, মেডিকেল কলেজ হয়নি, বিশ্ববিদ্যালয় হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে এমন প্রার্থী যারা আমাদের এই দীর্ঘদিনের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করবে। আমরা সবসময় অবহেলিত হয়ে আছি। আমরা অনেক কিছু থেকে এখনও বঞ্চিত। তাই সামনে নির্বাচনে ভোটে এগুলো উল্লেখযোগ্য হিসেবে কাজ করবে বলে আমি মনে করি।’
জনউদ্যোগ শেরপুরের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এ নির্বাচনে নতুন ও তরুণ ভোটাররাই বড় একটা ফাক্টর হবে বলে মনে করি। আমার ধারণা তারা প্রথম ভোট দিবে তাই তারা কেন্দ্রে যাবেই এবং তাদের ভোটেই জয় পরাজয় নির্ভর করতে পারে। নতুন ভোটারদের প্রত্যাশা রয়েছে শিল্প কলকারখানা, কর্মসংস্থান ও মেডিকেল কলেজ তৈরির প্রতি।’
শেরপুর জেলা নির্বাচন অফিসার মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক বলেন, ‘শেরপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় তিনটি সংসদীয় আসন। তিনটি আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে। সকল বৈধ ভোটাররা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার তালিকায় আছেন। তারা সবাই নিজ নিজ আসনের কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে তিনটি আসনে মোট ১৬ প্রার্থী লড়ছে। এসব প্রার্থীর মধ্যে শেরপুর-১ঃ সদর আসনে সাতজন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের বর্তমান সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ মো. আতিউর রহমান আতিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন ছানু, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএ) নোঙর প্রতীকের অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল্লাহ, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকের মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) একতারা প্রতীকে আবুল কালাম আজাদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গামছা প্রতীকে মো. বারেক বৈদেশি এবং জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মাহমুদুল হক মনি প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী)ঃ এ আসনে মোট তিনজন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত দলীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা নৌকা প্রতীকের বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাসদ থেকে মশাল প্রতীকে লাল মো. শাহজাহান কিবরিয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকে সৈয়দ মুহাম্মদ সাঈদ প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী)ঃ এ আসনে মোট ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের এডিএম শহিদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকে এসএমএ ওয়ারেজ নাঈম, জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের মো. সিরাজুল হক, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গামছা প্রতীকের মো. সুন্দর আলী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইকবাল আহসান ঈগল এবং কেটলি প্রতীকে মিজানুর রহমান রাজা প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। ইতোমধ্যেই জেলার তিনটি আসনেই নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে। এখন অপেক্ষা শুধু ভোটগ্রহণের দিনক্ষণের।