বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের দাবির মুখে হিজড়াদের নাগরিকত্ব ও তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। হিজড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যগত উন্নয়নে সরকার ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশের ৭টি জেলায় পাইলট কর্মসূচি গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন পিছিয়ে ছিলো শেরপুরের হিজড়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা। এ নিয়ে বেশ ক্ষোভ থাকলেও সম্প্রতি শেরপুরের নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের সহযোগিতায় হিজড়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করছে। এতে করে যেমন কমেছে নাগরিক জীবনে হিজড়াদের উৎপাত, তারাও রয়েছে বেশ স্বাচ্ছন্দে।
হিজড়া জনগোষ্ঠীর ৫১জন সদস্য নিজেকে স্বাবলম্বী করতে ইতোমধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে শেলাই প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করেছে। বর্তমানে তাদের কাজের আগ্রহ দেখে সবাই বেশ খুশিও। এর ধারাবাহিকতায় দেশের প্রথম জেলা হিসেবে শেরপুরে হিজড়া সম্প্রদায়ের ৫৭ জন সদস্যের বাসস্থান তৈরির জন্য দুই একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া গ্রামে হিজরাদের জন্য এ আবাসন তৈরি করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
৩ জুন রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসক সভাকক্ষে জেলার হিজড়া সম্প্রদায়কে ঈদ উপহার দেওয়ার সময় জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, অবহেলিত এ সম্প্রদায়কে সমাজের মূলশ্রোতে সামিল করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে হিজড়াদের সাথে মতবিনিময়কালে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের বাসস্থানের জন্য আমরা পত্র পাঠিয়েছিলাম। ইতোমধ্যেই তা অনুমোদিত হয়েছে। আন্ধারিয়া গ্রামে হিজড়াদের জন্য দুই একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। সেখানে তাদের বাসস্থান করে দেওয়া হবে। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিজড়াদের জন্য ভীষণ আন্তরিক বলে এসময় উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক।
এদিন ঈদ উপহার হিসেবে ৩০ জন হিজড়ার হাতে ৫০ কেজি চাল, ৫০ কেজি সেমাই, ডাল, সুজি, টি-ব্যাগ নারকেল তেল ও প্রসাধনীসহ ১২ প্রকারের জিনিস তুলে দেওয়া হয়। এসময় শেরপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক এটিএম জিয়াউল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জন কেনেডি জাম্বিল, এনডিসি মো. মেজবাউল আলম ভূঁইয়া, সাংবাদিক হাকিম বাবুল, মেরাজ উদ্দিন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
ঈদ উপহার গ্রহণ করে হিজড়া সম্প্রদায়ের নেতা শেরপুর সরকারী কলেজের অনার্সর ছাত্রী নিশি সরকার বলেন, আমরা ভীষণ খুশি হয়েছি। ডিসি ম্যাডাম আমাদের কথা দিয়েছিলেন বাসস্থান করে দেবেন। আজ ঈদ উপহার নিতে এসে বাসস্থানের খবর পেয়ে খুব ভাল লাগছে। তিনি বলেন, আমরা সমাজে ভীষণভাবে অবহেলিত। আমাদের দেখে মানুষ হাসে, ঘৃণা করে। কিন্তু আমাদের যে কত কষ্ট তা মানুষ বোঝে না। আমাদের পরিবার নেই, সংসার নেই। বাবা-মা ভাইবোন নেই। ক্ষুধার জ¦ালায় মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। শুনেছি বাসস্থান হওয়ার পর আমাদের কর্মসংস্থানের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে। এসব করা হলে আমরা দেশের জন্য অবদান রাখতে পারবো।