বিশ্বে পর্যটন একটি সম্ভাবনাময় খাত। পর্যটন শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়গুলো নিয়ে অনেক কথা উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। সেইসব সমস্যা, সম্ভাবনা আর সমাধানের কথা জানতে ও সবাইকে জানাতে শেরপুরের তরুণ সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী ইমরান হাসান রাব্বীর সঞ্চালনায় শেরপুর টাইমস ডট কমের ভিন্নধর্মী আয়োজন “সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ফেসবুক লাইভ” অনুষ্ঠানে উঠে এসেছে শেরপুরের পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। “শেরপুর টাইমস ডট কম”, “আমাদের শেরপুর” ফেসবুক পেজ ও “শেরপুর জেলার খবর” ফেসবুক গ্রুপ থেকে একই সময়ে এই লাইভটি সম্প্রচারিত হয়। সংযুক্ত হয়েছিলেন প্রায় ৫শতাধিক অনলাইন একটিভিস্ট।
বুধবার রাতে অনুষ্ঠানটির নির্ধারিত বিষয়ে ফেসবুক লাইভে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, তরুণ সংগঠক, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মীরা সংযুক্ত হয়েছিলেন মুক্ত আলোচনায়।
আলোচনায় অতিথি ছিলেন শেরপুর সরকারী কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শিব শংকর কারুয়া, চ্যানেল আই এর জেলা প্রতিনিধি হাকিম বাবুল, দেশ টিভির জেলা প্রতিনিধি রফিক, আঁচড় অংকন নিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা সাইফুল আলম শাহীন।
এসময় সকল অংশগ্রহণকারীদের মতামত ও প্রশ্নের উত্তর এবং আলোচ্য বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব, ভূমিকা ও কর্মকান্ড নিয়ে মুখ্য আলোচক হিসেবে সংযুক্ত হয়েছিলেন শেরপুর স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এটিএম জিয়াউল ইসলাম (উপ সচিব)।
প্রায় ১ ঘন্টা ৪০ মিনিটের এই আলোচনায় শেরপুরের পর্যটন সম্ভাবনা বিকাশে স্ব স্ব অবস্থান থেকে নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে এবং সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে মতামত প্রদান করেন। এসময় বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা সমস্যা, সম্বন্বিত উদ্যোগ ও সঠিক পরিকল্পনার অভাব, প্রচার না থাকা, পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সংস্কার না হওয়া, পর্যটন নিয়ে স্থানীয়দের দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
মুক্ত আলোচনায় টেলিফোনে সংযুক্ত হয়ে প্রভাষক মহিউদ্দিন সোহেল, পর্যটক সফিকুল ইসলাম সুখন ও আসিফ শাহনেওয়াজ তুষার, শুভ সংঘের সাধারন সম্পাদক সোহেল রানা, গণমাধ্যমকর্মী জাহিদুল হক মনির ও তরুণ বিতার্কিক এমদাদুল হক রিপন শেরপুরের পর্যটন সম্ভাবনার বিকাশে নিজেদের দায়িত্ব, সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে নিজেদের মতামত পোষন করেন।
ফোনে সংযুক্ত হয়ে ঝিনাইগাতী থেকে জাহিদুল হক মনির গজনী অবকাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “শীত মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে গজনী। কিন্তু চলতি সময়ে ঘটে যাওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনা পর্যটন বিকাশে হুমকি স্বরুপ। এই অপ্রীতিকর ঘটনার সাথে জড়িতদের কি এখন পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে ?”
এমদাদুল হক রিপন বলেন, “পর্যটন ব্র্যান্ডিং এর প্রচারে প্রশাসন কতটুকু স্বোচ্ছার? পর্যটন শিল্পের বিকাশে শিক্ষকরা কতটুকু ভূমিকা পালন করছেন? পর্যটনের বিকাশের জন্য পরিবেশের উন্নয়ন ও প্রশাসনের ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারণা জরুরী।”
সোহেল রানা বলেন, ” বিজ্ঞাপনের নিচে চাপা পড়েছে, গজনীর স্মৃতিস্তম্ভ। শহীদদের স্মরণে দেয়া হয়নি কোন পুষ্পার্ঘ। অযত্ন অবহেলায় কাটা জাতীয় গাছে ছেয়ে গেছে স্মৃতিস্তম্ভের বেদী। আগত দর্শণার্থীদের দেখার জন্য নেই কোন ব্যবস্থা।”
সফিকুল ইসলাম সুখন বলেন,” পর্যটন সম্ভাবনা বিকাশে যোগযোগ ব্যবস্থা, আগত দর্শনার্থীদের রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার ব্যপারে জোরদার হওয়া প্রয়োজন।”
আসিফ শাহনেওয়াজ তুষার বলেন, “শুধুমাত্র নিরাপত্তার অভাবে মধুটিলা ইকোপার্ক মুখ থুবড়ে পড়ে যাবার মতো অবস্থায় আছে। তাই নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। সেই সাথে সিডিউল ও ট্যুর গাইডের ব্যভস্থা করলে পর্যটকরা উপকৃত হবে।”
প্রভাষক মহিউদ্দিন সোহেল বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ও পুরাকীর্তি গুলো সংস্কার ও সংরক্ষণ করে পর্যটকদের আগ্রহী করা যেতে পারে।”
আলোচনার অতিথি সাইফুল আলম শাহীন বলেন, “মূল প্রকৃতি বাদ দিয়ে কৃত্রিম স্থাপনা আর দেশী বৃক্ষের বদলে বিদেশী বৃক্ষের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নতুন স্থাপনাগুলোতে রুচিবোধ পরিবর্তন করে এবং বেদখল জমি উদ্ধার করে বড় পরিসরে দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক পার্ক গড়ে তুললে পর্যটকরা বেশি আকর্ষিত হবে।”
গণমাধ্যমকর্মী রফিক মজিদ বলেন, সার্বিক ঐক্যবদ্ধতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য খাবার হোটেল ও রাত্রি যাপনের জন্য আবাসিক হোটেল তৈরী হলে পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পাবে।”
গণমাধ্যমকর্মী হাকিম বাবুল বলেন, “পর্যটন সম্ভাবনার বিকাশে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য প্রদক্ষেপ গ্রহণ করে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সাথে ও স্থানীয়দের সাথে সমন্বয় করে পর্যটনের বিকাশ সম্ভব। ”
শিক্ষক প্রতিনিধি শিব শংকর কারুয়া বলেন, “পর্যটন বিকাশে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালন করতে হবে। এজন্য সবাইকে সমভাবে সচেতন হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।”
আলোচনার মুখ্য আলোচক এটিএম জিয়াউল ইসলাম বলেন, অনেক আগে থেকেই শেরপুর একটি পর্যটন সমৃদ্ধ এলাকা। সম্প্রতি সরকারের নির্দেশনায় শেরপুরকে পর্যটনের মাধ্যমে ব্র্যান্ডিং এর কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে রাংটিয়াতে একটি মোটেল তৈরীর প্রস্তাবনা ও পর্যটন ফ্রন্ট ডেস্ক তৈরীর প্রক্রিয়া চলছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার করতে আইন শৃঙ্খলা বাহনী তৎপর আছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শেরপুরকে পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত করা সম্ভব।”
সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা, পাহাড়-নদী-সমুদ্র বিধৈত এ দেশের প্রাকৃতিক সুর্ন্দয মুগ্ধ করে সবার মন, হৃদয়ের গভীরে তৈরি করে এক স্নিগ্ধ অনুরন । পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো অনেক সম্পদই রয়েছে আমাদের এই দেশে। তেমনি আমাদের শেরপুরেও রয়েছে সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন পর্যটন সম্ভাবনা। সবার মিলিত প্রচেষ্টায় “পর্যটনের আনন্দে, তুলসীমালার সুগন্ধে-শেরপুর” এই স্লোগানে শেরপুরকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা যাবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
এই ফেসবুক লাইভটি সম্পূর্ণ শুনতে এখানে ক্লিক করুন।