শেরপুরে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। হাসপাতালের নির্ধারিত শয্যার বাইরে মেঝে ও বারান্দায় রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অনেকে আবার চিকিৎসা নিচ্ছেন বাড়িতে থেকেই। এমন পরিস্থিতিতে স্যালাইনের চাহিদা বাড়লেও তা মিলছে না সহজে। রোগীর স্বজনরা বলছেন, হাসপাতালে স্যালাইনের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের পরিমাণ নগণ্য; বাড়তি দামেও ফার্মেসিতে মিলছে না। ফলে জরুরি মুহূর্তে প্রয়োজনীয় স্যালাইন না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন রোগীরা।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, রোগীর চাপে স্যালাইনের চাহিদা বাড়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। শিগগির এর সমাধান হবে।
গত বৃহস্পতিবার শেরপুর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জেলার সদর, শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী, নকলা, নালিতাবাড়ী উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলার অনেক রোগীও ভর্তি রয়েছেন। সেখানে কথা হয় শ্রীবরদী উপজেলা থেকে আসা মশিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন চার দিন ধরে।
মশিউর বলেন, ‘চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী, এনএস ও ডিএনএস স্যালাইন দেওয়ার কথা থাকলেও, হাসপাতাল থেকে তা দেওয়া হচ্ছে না। কারণ জানতে চাইলে তারা (ওয়ার্ড বয় ও নার্সরা) বলেন, সরবরাহ না থাকায় আপাতত আমরা এসব স্যালাইন দিতে পারছি না। পরে বাধ্য হয়েই বাইরের ফার্মেসি থেকে বাড়তি দামে স্যালাইন কিনতে হয়েছে।’
একই কথা জানালেন সদর উপজেলার কামারের চরের মমতা বেগম। তিনি বলেন, ‘বাপুরে সাত দিনেও স্যালাইন দেওয়া হয়নি পোলার শরীরে।’ এতে বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে তার শিশু ছেলে। তিনি অভিযোগ করেন, পরে বাইরে কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরে একটি ফার্মেসি থেকে ১০০ টাকার স্যালাইন কিনেছেন ৪০০ টাকায়।
পাশের বিছানার রোগী শহিদুলের স্বজন সোহরাব বলেন, ‘শত শত রোগী এ হাসপাতালে। ডাক্তার আসে দিনে একবার। ডাক্তারের সংকট। আর নার্সদের ব্যবহার খুব বাজে। একবারের জায়গায় দুইবার ডাক দিলে বকাঝকাও করে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এদের (নার্স) আচরণের ওপর কাউন্সেলিং জরুরি।’
হাসপাতাল থেকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রোগী বাঁচাতে হবে, তাই বাড়তি দামে বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসি।’
শুধু জেলা হাসপাতালে নয়, খোঁজ নিয়ে জানা যায় জেলার প্রায় সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই একই চিত্র। চাহিদার তুলনায় হাসপাতাল ও ফার্মেসিতে পর্যাপ্ত স্যালাইন না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, কোম্পানি সরকারি হাসপাতালে স্যালাইন সাপ্লাই দিলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, চাহিদা অনুযায়ী কোম্পানি থেকে স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। এক লাখ টাকার স্যালাইন অর্ডার দিলে পাওয়া যায় দশ হাজার টাকার।
জেলা সিভিল সার্জন অনুপম ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাড়তি চাহিদার জন্য স্যালাইনের সংকট রয়েছে। দ্রুতই এ সংকট কেটে যাবে।