শেরপুরে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও পুলিশের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতের সময় জনসচেতনতা তৈরীতেও কাজ করছে তারা। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রমে তালিকা প্রণয়ন ও খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতেও কাজ করছে এসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
জেলা প্রশাসনের করোনা ইমার্জিন্সি সাপোর্ট টিমে কাজ করছে শেরপুর জেলা ছাত্রলীগ, রেড ক্রিসেন্ট, সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরাম, বিডি ক্লিন নামের বেশ কয়েকটি সংগঠন। এদিকে সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের সাথে এক হয়ে কাজ করছে শেরপুর ইয়্যুথ রিপোর্টার্স ক্লাব, শেরপুর জেলা রক্তদান সমাজ কল্যাণ সংস্থ্যা, ভ্যালেন্টাইন বার্ড ও ডিভাইন হেল্পার্স নামের কয়েকটি সংগঠন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে শেরপুর শহরের ১৪টি পয়েন্টে জনসচেতনতা তৈরী ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করছে করোনা ইমার্জিন্সি সাপোর্ট টিমের সদস্যরা। এছাড়া তালিকা অনুযায়ী ত্রাণ সরবরাহ ও
এদিকে জেলা পুলিশের কাজ করছে করোনা ইমার্জিন্সি রেসপন্স টিম। শেরপুর প্রেস ক্লাব, শেরপুর ইয়্যুথ রিপোর্টর্স ক্লাব, শেরপুর জেলা ডিবেট ফেডারেশন, সুহৃদ সমাবেশ, কালের কণ্ঠ শুভ সংঘ নামের কয়েকটি সংগঠন। জেলা পুলিশের ত্রাণ সহযোগিতাসহ মানুষের মাঝে করোনা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরীর লক্ষে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে এসব সংগঠন।
এছাড়া বাংলাদেশে প্রথমবারের মত কাজ করছে স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম নামের আরো একটি শিক্ষার্থী সংগঠন। জেলা পুলিশের পৃষ্ঠপোষকতায় ও শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সহযোগিতায় শেরপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটি জেলা শহরের ৩৯টি স্পটে কাজ করছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন বাজারে বাজারে জনগণকে সচেতন করা ও সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে কাজ করছে এই সংগঠন। এছাড়া জেলা পুলিশের সাথে জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের ধান কাটা কর্মসূচির মাধ্যমে ধান কেটে মাড়াই করে দিয়েছে স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সদস্যরা। এদিকে জেলা শহরের মত প্রতিটি উপজেলাতেও একইভাবে কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
বিডি ক্লিন ও রক্ত সৈনিক বাংলাদেশের জেলা সমন্বয়ক আল-আমিন রাজু বলেন, দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই আমাদের সদস্যরা মাঠে কাজ করছে। কৃষকের ধান কাটা, নিজেদের অর্থায়নে সাবান, মাস্ক ও জীবানুনাশক বিতরণ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জীবানুনাশক স্প্রে করেছি আমরা। এছাড়া নিজের অর্থায়নে ত্রাণ বিতরণ ও জেলা প্রশাসনের ত্রাণ বিতরণসহ সচেতনতা তৈরীতে কাজ করছে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা।
রেড ক্রিসেন্ট শেরপুর জেলা ইউনিটের যুব প্রধান ইউসুফ আলী রবিন বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক আমরা শুরু থেকেই হাসপাতাল, থানা, জেলা পুলিশের কার্যালয়, জেলা প্রশাসনের কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে জীবানুনাশক ছিটিয়েছি। জেলা প্রশাসনের সাথে ত্রাণ কার্যক্রমে নিয়মিত অংশ নিচ্ছি। এছাড়া আমাদের রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকেও দুস্থদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত আছে। এখন আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে বিভিন্ন জনসচেতনতা মূলক কাজ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে শহরে ও শহরের বিভিন্ন স্থানে কাজ করে যাচ্ছি। করোনার প্রাদুর্ভাব শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে কাজ করবো।
শেরপুর ইয়্যুথ রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি ও সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের আহবায়ক সোহেল রানা বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামে বেশ কয়েকটি সংগঠন এক সাথে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এখন আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে ভ্রাম্যমান আদালতের সময় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছি। আমাদের সাথে জেলার বেশিরভাগ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করছে। এছাড়া বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনও পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপশি আমাদের সাথে কাজ করছে। শেরপুর ইয়্যুথ রিপোর্টার্স ক্লাবের সদস্যরাও নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা আক্রান্তের বাড়ীর খবর সংগ্রহ ও সচেতনতা তৈরীর কাজ করে যাচ্ছে।
স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি শোয়েব হাসান শাকিল বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটার শুরু থেকেই আমরা শেরপুর পৌরশহরে ৫৩টি মহল্লায় কাজ করছি আমরা। এছাড়া সদর উপজেলায় ১৪ ইউনিয়নে ২৪ কমিটি মানুষকে সচেতন করতে ও ঘরে থাকতে সচেতন করে কাজ করছে। জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ১৪টি টিম এখনো কাজ করছে। জেলা পুলিশের সাথে সমন্বয় করে ৫ ইউনিয়নেরি প্রান্তিক কৃষকের ৪একর জমির ধান কাটা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি আমরা। এছাড়া নয়ানীবাজারে ভীড় এড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও জীবানুনাশক টানেল ব্যবহারে উব্দুদ্ধ করছে স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সদস্যরা।
শেরপুরের করোনা যোদ্ধা হিসেবে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে কাজ করে যাওয়া এসব সংগঠনের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন শেরপুরকে সুস্থ্য রাখতে, শেরপুরকে ভালো রাখতে। তাই করোনার এই সময়ে সবাইকে সচেতন হয়ে ঘরে থাকার পরামর্শ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের।