শখের বশে একদিন ফেসবুকে বেশ কিছু ফটোশুটের ছবি আপলোড করেছিলেন। বন্ধুদের প্রশংসার তো শেষ নেই। নির্মাতাদের নজরে পড়ে যান তিনি। এরপর ফটোশুটের জন্য আমন্ত্রণ পেতে থাকেন বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থা থেকে। বদলানো শুরু করে তার জীবনের খাতা। এই হলো আজকের ব্যস্ত অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার ক্যারিয়ার শুরুর গল্প। জীবনের সফলতার সিঁড়িতে একটু একটু করে পা ফেলছেন। মডেলিং, নাটক ও চলচ্চিত্রে ছড়িয়েছেন আলোর দ্যুতি। ছোটবেলা থেকে শিল্প-সংস্কৃতির সংস্পর্শে তার আসা। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে মফস্বলে বেড়ে ওঠা। স্কুলের গণ্ডিতে পা দেওয়ার আগে সঙ্গীতের ওপর তালিম নিয়েছিলেন। ফারিয়া বলেন, ‘অনেকটা হঠাৎ করেই মিডিয়ায় এসেছি। অভিনয় করার ব্যাপারে আমার তেমন কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তবে অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসাটা হুট করেই জন্ম নেয়নি। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই আজকের এই পর্যায়ে পৌঁছেছি। এই চলার পথে সবার সহযোগিতা পেয়েছি বলে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে পেরেছি।’
আগের মতো ফারিয়াকে ছোটপর্দায় খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে টিভি নাটকে অভিনয় কমিয়ে দিয়েছেন ফারিয়া- নাকি অভিনয় করার ব্যাপারে একটু বেশি সতর্ক? এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি বেছে কাজ করার চেষ্টা করি। শুধু শুধু পর্দায় মুখ দেখিয়ে কী লাভ। আগে স্ট্ক্রিপ্ট নিই। প্রতিটি নাটকের গল্প ও চরিত্র পছন্দ হলে সিডিউল দিয়ে থাকি। এ জন্য হয়তো অন্যদের চেয়ে আমার কাজের সংখ্যা কম। বেশিসংখ্যক কাজ করলে অনেক সময় ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে যায়। দিন শেষে ভালো কাজই টিকে থাকে।’
সম্প্র্রতি রিয়্যালিটি শো ‘কে হবেন মাসুদ রানা’ প্রতিযোগিতার বিচারক হয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন ফারিয়া। ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী মেনস হিরো-কে হবে মাসুদ রানা’ প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্বের কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাতে প্রতিযোগীদের সঙ্গে বিচারকদের আপত্তিকর ব্যবহার ও মন্তব্য খুবই সমালোচিত হয়। এ নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় ফারিয়াকে। এ নিয়ে থানা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এই মডেল অভিনেত্রী।
ফারিয়া বলেন, ‘কে হবেন মাসুদ রানা প্রতিযোগিতার বিচারক হওয়ার পর আমার ফেসবুক পেজে বিভিন্নজন আপত্তিকর মন্বব্য করেছেন। একজন ফেসবুকে আমার ফোন নম্বর দিয়ে দেয়। এ কারণে অসংখ্য অপরিচিত ব্যক্তি তাকে ফোনে বিরক্ত করছিল। যে জন্য নিজের প্রয়োজনীয় ফোনকলও রিসিভ করতে পারিনি। কয়েকটি ফেসবুক আইডি থেকে আমার নামে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়। যেসব ভিডিও সবাই দেখছেন, এগুলো এই প্রতিযোগিতার বিভিন্ন সময়ের। এর মধ্য দিয়ে প্রতিযোগীদের মানসিক অবস্থা, পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতা দেখা হয়েছে। কেউ একজন প্যানেল থেকে এসব ফুটেজ নিয়ে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে।’
শবনম ফারিয়া আরও বলেন, ‘আমি এই প্রতিযোগিতার প্রাথমিক রাউন্ডের একজন বিচারক ছিলাম। যদি প্রতিযোগিতার কোনো দিক নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ বা আপত্তি থাকে, সেটা আপনারা প্রতিযোগিতার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেই পারতেন। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে আক্রমণ করার কোনো মানে ছিল না। এ কারণে নিজের ফেসবুক কয়েকদিন বন্ধ রেখেছিলাম। যার কারণে অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে অনেকে আমাকে ভুলও বুঝেছেন।’
গত ঈদেও শবনম ফারিয়া অভিনীত ‘বুক ভরা ভালোবাসা ২’, রুবেল হাসানের টেলিছবি ‘তুমি যদি জানতে’, সাজ্জাদ সুমনের ‘ভূতের হাত’, সোহেল আরমানের ‘কাসেম কলি’ নাটকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছেন।
ফারিয়ার প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি ছিল নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘দেবী’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত অনম বিশ্বাসের পরিচালনায় ‘দেবী’। চলচ্চিত্রে জয়া আহসানের ‘রানু’ চরিত্রের পাশাপাশি শবনম ফারিয়ার ‘নীলু’ চরিত্রটিও দর্শক সাদরে গ্রহণ করে। এ চলচ্চিত্রের জন্য বাচসাস পুরস্কারসহ অন্যান্য পুরস্কারও ঘরে তুলেছেন ফারিয়া। বর্তমানে ব্যস্ত আছেন এনটিভিতে প্রচারিত ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ ধারাবাহিক নিয়ে। এটি পরিচালনা করেছেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। যৌথ পরিবারের গল্পে নির্মিত এ ধারাবাহিকে তার চরিত্রের নাম ‘রুমা’। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নাটকটিতে অনেক বৈচিত্র্য আছে। এতে আমাদের চেনা-জানা কিছু চরিত্রকে পর্দায় তুলে এনেছেন নির্মাতা। শহরে বন্দি না থেকে গ্রামেও নাটকটির শুটিং করা হয়েছে। নাটকটি নিয়ে বেশ সাড়া পাচ্ছি।’
অভিনয়, সংসার সামলানোর পাশাপাশি ফারিয়া সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন। মডেলিং নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা শবনম ফারিয়ার নাটকে অভিষেক হয় ২০১৩ সালে। ‘অলটাইম দৌড়ের ওপর’ নাটকটিতে তার অভিনয় দারুণ প্রশংসিত হয়। পরে মডেলিং ও নাটকে সমানতালে কাজ করেন তিনি। শবনম ফারিয়া বলেন, ‘আমি ভালো অভিনেত্রী হতে চাই। তাই মডেলিং-নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও কাজ শুরু করেছি। দেশে এখন আগের চেয়ে ভালো চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। তবে এফডিসি ঘরানার ছবিতে কাজের কোনো আগ্রহ নেই আমার। আমি মনে করি, আমার কোনো গ্ল্যামার নেই। অভিনয় দিয়েই আমাকে টিকে থাকতে হবে। এভাবেই আগামীর পথ পাড়ি দিতে চাই। আশা করছি আমি আমার স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে পারব।’ ভীষণ স্বপ্নবিলাসী মানুষ ফারিয়া। তাই তো মাঝে মধ্যে তিনি ভাবেন ওই নীল আকাশে যদি উড়ে বেড়ানো যেত! ভাবুক চিত্ত কল্পনার রঙ মিলেই রঙিন হয়। তবে স্বপ্নবাজদের শুধু কল্পনায় লীন হয়ে যেতেই যত আপত্তি। বাস্তবতার মেলবন্ধনেই খুঁজে পান স্বপ্নসুখের স্বাদ।