নেপালের কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে একপেশে দোষারোপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন গ্রুপ অব বাংলাদেশ (এএআইজি-বিডি) ।
নেপাল সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশন দলে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে থাকা এএআইজি-বিডি প্রধান ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট অপারেশন কনসালট্যান্ট সালাউদ্দিন এম রহমতউল্লাহ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
গত বছরের ১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনার জন্য পাইলট আবিদ সুলতানের মানসিক চাপে থাকাকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে নেপাল সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশন। কমিশন তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলেছে, পাইলট ‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত’ থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন। সেদিন বিমানটি অবতরণের সময় কন্ট্রোল টাওয়ার ও বিমান কর্মীদের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তিকে সম্ভাব্য কারণগুলোর অংশ বলেও মনে করছে কমিটি। গত রবিবার নেপালের পর্যটনমন্ত্রী রবীন্দ্র অধিকারীর কাছে ৪৩ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। বিবিসি ও রয়টার্স এ তথ্য জানায়।
তবে ওই প্রতিবেদনে পাইলটকে একপেশে দোষারোপ করা হয়েছে উল্লেখ করে সালাউদ্দিন এম রহমতউল্লাহ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নেপালের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে মিথ্যাচার নেই। তবে রিপোর্টে এটিসি (বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ) সম্পর্কে কিছু তথ্য এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এটিসি বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে সংশোধনী দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ক্যাপ্টেন সালাহ্উদ্দিন এম রহমতউল্লাহ।
ক্যাপ্টেন রহমতউল্লাহ বলেন, পাইলট ল্যান্ড করতে অ্যাপ্রোচ মিস করেছিল। কিন্তু এটিসি পাইলটকে সহায়তা করতে পারত, কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। বরং বিমানটি যখন এটিসি টাওয়ারের কাছ দিয়ে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়, তখন এটিসি’র কর্মকর্তারা টেবিলের নিচে আশ্রয় নেন।
সংবাদ সম্মেলনে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাঈম হাসান বলেন, অনেক সময় পাইলটরা দিক হারিয়ে ফেলেন। এটা প্রায়ই ঘটে। নেপালে পাহাড়ঘেরা বিমানবন্দর হওয়ায় এ ঝুঁকি বেশি। সেদিন পাইলট দিক হারিয়ে ফেলেছিলেন। পাইলট কোনো কারণে অ্যাপ্রোচ মিস করেছেন। তবে তাকে সহায়তার করার দায়িত্ব ছিল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের। নেপালের এটিসি সেটি করেনি।
নেপালের তদন্ত কমিশন বলছে, ককপিটের ভয়েস রেকর্ডার পরীক্ষা করার পর তাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, ক্যাপ্টেন বড় ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। প্রায় এক ঘণ্টার ওই ভয়েস রেকর্ডে কো-পাইলট পৃথুলা রশিদের সঙ্গে কথোপকথনে পাইলট আবিদের ‘মানসিক অস্থিরতা এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে তার অসতর্কতার’ বেশ কিছু নমুনা পাওয়া গেছে।
তদন্ত কমিশন বলছে, অসতর্কতার কারণে পাইলটরা বুঝতে পারেননি, তাদের ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ উড়োজাহাজটি নির্ধারিত পথ থেকে কতটা সরে গেছে। এর অর্থ হল, তারা ঠিকমতো রানওয়ে দেখতে পাচ্ছিলেন না।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১২ মার্চ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বোমবার্ডিয়ার ড্যাশ ৮কিউ৪০০ উড়োজাহাজটি নেপালে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়। উড়োজাহাজটি বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত হন ৫১ জন। নিহতদের মধ্যে ২৮ জন বাংলাদেশি, ২২ জন নেপালি ও একজন চীনা নাগরিক ছিলেন। নিহত হন ফ্লাইটের সহকারী পাইলট পৃথুলা রশিদ। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর মারা যান পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ।
সূত্র: দেশ রূপান্তর