শেরপুরে দমকা হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে বোরো আবাদসহ শাক-সবজি ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঋণ নিয়ে করা আবাদ নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সহস্রাধিক কৃষক।
জেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদের ক্ষতি হয়েছে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে।
জেলায় চলতি মৌসুমে ৯১ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আর গেল মঙ্গলবার ভোররাতের টানা বিশ মিনিটের দমকা হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে বোরো আবাদ, শাক-সবজি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন ভেঙে গেছে কৃষকের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধান কাটা ও ঘরে তোলার মৌসুমের শুরুর দিকে ধমকা হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে সহস্রাধিক কৃষক বেকায়দায় পড়েছেন। নিচু এলাকায় বৃষ্টিতে ধান গাছ নুয়ে পড়ে তলিয়ে গেছে; শিলার আঘাতে ঝরে গেছে ধান, ভেঙে গেছে গাছের কাণ্ডও। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শ্রীবরদী উপজেলায়।
শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনিয়া ও গোশাইপুর ইউনিয়নেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বোরো আবাদের। শিলাবৃষ্টিতে এখানকার ধানের কাণ্ডও থেঁতলে গেছে।
কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নের করুয়া ভাটি পাড়ার কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমার এক-একর জমির ধান সব শেষ। শিলে ধান গাছ থেঁতলে গেছে। সব ধান মাটিতে ছিড়ে পড়ে গেছে। এখন নিজে কেমনে চলমু আর গরু বাছুররেই কি খাওয়াইমু।’
একই গ্রামের মগর আলী, আব্দুল খালেক, শাহাদাৎ আলীসহ প্রায় শতাধিক কৃষক ঋণ করে আবাদ করায় বিপাকে পড়েছেন।
আবার অনেকেই ক্ষোভে ক্ষেতে গরু লাগিয়ে দিয়েছেন। কেউবা ধানগাছ কেটে এনে বাড়িতে গরুকে খাওয়াচ্ছেন। তাদের দাবি, সরকারি সহায়তা পেলে কিছুটা হলেও উপকৃত হবে।
এদিকে, ঝড়ো হাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়িও। শিলায় ছিদ্র হয়ে গেছে ঘরের চাল।
কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নের করুয়া ভাটি পাড়ার খালেদা (৪২) বেগম। তিনি বলেন, বাপুরে সেহরি খাওয়ার কিছুক্ষণ পর বাতাস আইলো (হলো)। এরপর হিল (শিল) পড়া ধরলো (শুরু হলো)। এতো জোড়ে হিল (শিল) পড়ছে, আমার ঘরের টিনের চাল চালনার মতো ছিদ্র হয়ে গেছে।
একইভাবে ওই গ্রামের মনুরা (৩৮) বেগম, আজিজুর রহমান (৬৫), সোহাগ (৩০)সহ অনেকের ঘরের চাল ছিদ্র হয়ে গেছে আবার অনেকের ঘরের চাল উড়ে গেছে।
জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে বলেন, শিলাবৃষ্টিতে জেলার ৫ হাজর হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শ্রীবরদী উপজেলায়। যেসব ক্ষেত আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে পটাশ অথবা ছত্রাকনাশক ঔষধ দেওয়া যেতে পারে, এতে কিছুটা ফল পাওয়া যাবে। আর যেসব ক্ষেত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব জায়গায় আউশ ধান আবাদের পরামর্শ দিচ্ছি। দ্রুত বীজতলা তৈরি করে আউশের বীজ বোপন করার পরামর্শ দেন এ কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশিদ বলেন, ধমকা হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে শেরপুরে বোরো আবাদের ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শ্রীবরদী উপজেলায়। সেখানে শিলাবৃষ্টিতে ধান গাছের কাণ্ডও থেঁতলে গেছে। অনেকের টিনের চাল ফুটো হয়ে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করার জন্য দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রানালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে।