চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) জবানবন্দি দেন তার স্ত্রী সামিরা হক ওয়ায়েজ। সালমান শাহর প্রকৃত নাম ছিল ওরফে চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন। এ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তর। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই জবানবন্দিতে সামিরা সালমানকে ইমন হিসেবে সম্বোধন করেন। তিনি জানান তার শাশুড়ির মারধর সহ, সালমান শাহর তার প্রতি প্রেম নিবেদন, শাবনূরের প্রেগন্যান্ট হওয়াসহ নানা ঘটনা। গত বছরের ২৪ মে পিবিআইকে ১৬১ ধারায় দেওয়া দুই পৃষ্ঠার ওই জবানবন্দির একটি অনুলিপি পেয়েছে দেশ রূপান্তর। সেখানে সামিরার সঙ্গে সালমানের প্রেম, বিয়ের আগে ‘সামিরাকে নিয়ে সালমানের পাগলামি’ এবং তার দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা নিয়েও বিস্তর বর্ণনা রয়েছে। সামিরা জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমি সামিরা হক ওয়ায়েজ (৪০), জিজ্ঞাসাবাদে আমি এই জবানবন্দি করিতেছি যে ১৯৯০ সালের ১২ জুলাই চট্টগ্রামের একটি ফ্যাশন শোতে সালমান শাহ ওরফে ইমনের খালা মলির মাধ্যমে ইমনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপর সাত দিন ইমন ঢাকায় যায়নি। ইমনের খালা মলি ইমনকে আমাদের লুসি বিউটি পার্লারে নিয়ে আসে। ফ্যাশন শো শেষে ইমন প্রায় সময় আমাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকত। আমাদের টিঅ্যান্ডটি নম্বরে ইমন আমাকে ফোন করত। সে আমাকে বিয়ে করতে চায়, আমাকে ছাড়া সে বাঁচবে না, আমাকে না পেলে আত্মহত্যা করবে বলে তার রক্ত দিয়ে আমাকে চিঠি লিখত। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় ইমনের মার সঙ্গে ফোন করা নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয় তার, এরপর ইমন নিজ বাসা৯০টি ইনোক্টিন (ঘুমের ওষুধ) খেয়ে মরতে চেয়েছিল। বিষয়টি ইমন আমাকে ফোনে জানালে আমি ইমনের ভাই বিল্টুকে জানাই।’
সামিরা বলেন, ‘১৯৯১ সালের ১৮ আক্টোবর “ও লেভেল” পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ঢাকায় আমার চাচা এনামুল হকের বাসায় আসি। সেখানে ইমন এসে আমার সঙ্গে দেখা করে। সেখান থেকে সে আমাকে গ্রিন রোডে তার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে সে তার বাবা, মা ও ভাই বিল্টুর সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। ১৯৯২ সালের নভেম্বর মাসে কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির শুটিংয়ের সময় ইমনের মার সঙ্গে ইমনের কথা-কাটাকাটি হয়। ওই সময়ই ইমন স্যাভলন খেলে তাকে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে ওয়াশ করানো হয়েছিল। ইমন ফেনসিডিলে আসক্ত ছিল। প্রথমে বেনসন সিগারেট পরে মালবোরো সিগারেট খেত ইমন। ১৯৯২ সালের ২০ ডিসেম্বর ইমনের সঙ্গে আমার বিবাহ হয়। বিবাহের পর হতে আমি স্বামীর সঙ্গে ঘরসংসার করে আসছিলাম। ইমনের মা আমাকে মারধর করত। তাই ইমন গ্রিন রোডের বাসা ছেড়ে ইস্কাটন রোডে বাসা ভাড়া করে আমাকে নিয়ে আলাদাভাবে থাকতে শুরু করে। আমাদের বাসার কাজের মেয়ে জরিনাকে আমার শাশুড়ি তার বাসায় কাজ করার জন্য নিয়ে এসেছিল। তিনি জরিনাকে মারপিট করে বের করে দিয়েছিলেন। এরপর আমার শ্বশুর জানান যে জরিনার সঙ্গে ইস্কাটন প্লাজার বাসার দারোয়ান আবদুল খালেকের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। এই অবৈধ সম্পর্কের একটি ক্যাসেট নাকি আমার শ্বশুরের কাছে ছিল। বিষয়টি জরিনাকে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কিন্তু জরিনা অস্বীকার করেছিল। আমার শ্বশুর তখন দারোয়ান খালেকের সঙ্গে আমার অবৈধ খারাপ সম্পর্ক আছে বলে ইমনকে জানালে তাদের বাপ-ছেলের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল।’
জবানবন্দিতে সামিরা আরও বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ১৫ জুলাই ইমন ভারতে গিয়েছিল। আমি তখন চট্টগ্রামে ছিলাম। সংবাদ পেয়ে আমি চিটাগাং থেকে ঢাকায় আসি, ঢাকায় এসে ইমনকে পাইনি। ইমন শাবনূরকে নিয়ে ভারত গিয়েছিল। ইমনের হাতে তখন প্রায় ২৭টি ছবি ছিল। প্রায় সবগুলো ছবিতে শাবনূরের সঙ্গে ইমনের জুটি ছিল। ইমন ভারত থেকে দেশে এসে শাবনূরকে নিয়ে ১৯৯৬ সালের ১ আগস্ট সিঙ্গাপুর গিয়েছিল। সিঙ্গাপুর গিয়ে শাবনূর ইমনকে জানিয়েছিল যে সে প্রেগন্যান্ট। সিঙ্গাপুরে তারা একটি হোটেলে ছিল। সেখানে শাবনূরের বাবা ও ভাই গিয়েছিল। শাবনূর ইমনকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিয়েছিল। ইমন কৌশলে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে এসে বিষয়টি আমাকে বলেছিল। যে ইমন প্রায় চার বছরের সংসারজীবনে আমাকে কোনো সন্তান দিতে পারল না, সেই ইমনের কারণে শাবনূর নাকি প্রেগন্যান্ট, কথাটা আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়েছিল। আর আমি তো জানতাম ইমনের এ বিষয়ে সমস্যা ছিল। আমার বাচ্চা না হওয়ার কারণে আমাদের পাশের বাসার সুইটি ভাবিসহ আমি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। ডাক্তার আমাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়েছিল যে আমার কোনো সমস্যা নেই। এখন আমার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। শাবনূর আমাদের বাসায় আসত। আমি তা পছন্দ করতাম না। এর আগে ইমন শাবনূরকে নিয়ে কক্সবাজারে একটি আউটডোর শুটিংয়ে গিয়েছিল। সেখানে শাবনূর হোটেল উপলের একটি রুমে ইমনকে ব্লক (আটকে) করে দিয়েছিল। ইমন সেখান থেকে কৌশলে বেরিয়ে এসে বিষয়টি আমাকে জানিয়েছিল। শাবনূরের মা ও আমার শাশুড়ি ইমনকে শাবনূরের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য খুবই আগ্রহী ছিল।’
জবানবন্দির আরেক অংশে সামিরা বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম গেলে ১৯৯৬ সালের ৩১ আগস্ট ইমন ও বিল্টু এবং খলনায়ক ডন আমাকে আনার জন্য চট্টগ্রাম গিয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর ডন চলে আসে। আমি ৩ সেপ্টেম্বর ইমনের সঙ্গে ঢাকায় আসি। শাবনূর-সালমান শাহ (ইমন) জুটি খুব জনপ্রিয় ছিল। শাবনূর ইমনকে ফোন করত এবং বাসায় আসত। আমার ও ইমনের সঙ্গে শাবনূরের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ইমন উত্তরায় একটি শুটিংয়ে গিয়েছিল। শুটিং শেষে বিকেল সাড়ে ৬টার সময় এফডিসিতে আসে এবং আমাকে সেখানে যাওয়ার জন্য ফোন করে ইমন। আমি তখন আমার শ্বশুরকে নিয়ে এফডিসিতে যাই। সেখানে একটি রুমে ছবির ডাবিং চলছিল। ডাবিংয়ের ফাঁকে শাবনূর বারবার ইমনকে জড়িয়ে ধরছিল এবং বিভিন্ন অশালীন আচরণ করছিল। এতে আমি খুব অস্বস্তি বোধ করছিলাম এবং সেখান থেকে চলে আসার চেষ্টা করছিলাম। ওই দিন বাদল খন্দকারের সঙ্গে ইমনের একটি ছবির চুক্তি হয়েছিল। বাদল খন্দকার ছবি শিডিউলের জন্য ইমনকে দেড় লাখ টাকা দিয়েছিল। ডাবিং শেষে আমি, ইমন ও বাদল খন্দকার একটি গাড়িতে এবং আমার শ্বশুর আবুলকে নিয়ে আরেকটি গাড়িতে করে বাসায় চলে আসি। আমার শ্বশুর বাসায় না উঠে নিচ থেকে চলে গিয়েছিল। আবুল শুটিংয়ের মালামালগুলো বাসায় রেখে রাত বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে খাবার খেয়ে আমাদের বাসায় থেকে গিয়েছিল। আমি, ইমন ও বাদল খন্দকার বাসায় এসে খাবার খাই। বাদল খন্দকার আমাকে শান্ত থাকতে বলে চলে গিয়েছিল। পরের দিন দুপুর সাড়ে ১২টার সময় হোটেল সোনারগাঁওয়ে চিত্রনায়িকা পপির সঙ্গে ইমনের একটি নতুন ছবির বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। ইমন শাবনূরের সঙ্গে নতুন করে ছবি করবে না বলে বাদল খন্দকারের সামনে একটি কন্ট্রাক ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। পরে রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ১২টার সময় শাবনূর পরপর দুইবার ইমনের সিটিসেল মোবাইল ফোনে কল করেছিল। ইমন সিটিসেল মোবাইল ফোনটি নিয়ে তখন বাথরুমে গিয়ে চিৎকার করে কথা বলেছিল এবং তাকে আর যেন ফোন না দেয় বলে কথা শেষ করে দিয়েছিল। এরপর রাত অনুমান ১২ ঘটিকার সময় ওই ফোনে শাবনূর আবারও একটি কল দিয়েছিল। ইমন তখনো বাথরুমে গিয়ে কথা বলেছিল। ওই সিটিসেল ফোনটি শাবনূরই ইমনকে গিফট করেছিল। তখন আমি রাগ করে নিচে চলে গিয়েছিলাম। নিচে ডিউটিতে থাকা দারোয়ান দেলোয়ার ও খালেকদের ইমন বলে দিয়েছিল যে আমি যেন বাইরে যেতে না পারি। পরে আমি বাসায় চলে আসি এবং কান্নাকাটি করি। তখন ইমন শাবনূরের দেওয়া গিফট একটি টেবিল ফ্যান, একটি চেয়ার ও সিটিসেল মোবাইল ফোনটি রাগ করে ভেঙে ফেলেছিল। এরপর ইমন মদ খেয়েছিল, তখনো আমি কান্নাকাটি করছিলাম। অনুমানিক রাত ৩টা থেকে ৪টার সময় আমি ও ইমন দুজনই বেডরুমে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরের দিন সকাল ৯টার সময় আমার শ্বশুর আসেন। আমি তাকে নাশতা খাইয়ে ৫০ হাজার টাকা দিই। তিনি টাকাগুলো নিয়ে চলে যান। এরপর আমি আমার বেডরুমে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকি। এরপর ইমন ঘুম থেকে জেগে উঠে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল। এরপর সে বাথরুমে যায়। বাথরুম থেকে বের হয়ে এসে ড্রেসিংরুমে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। এর কিছুক্ষণ পর ওমর (সালমানের পালিত ছেলে) অন্য বাথরুমে গোসল করে বের হয়। ওমরের পরনের কাপড় ড্রেসিংরুমে ছিল। ডলি (সালমানের বাসার গৃহকর্মী ও ওমরের মা) ও ওমর তখন ড্রেসিংরুমের দরজা বন্ধ দেখে দরজা খোলার জন্য ইমনকে ডাকাডাকি করছিল। ডাকাডাকিতে আমি ঘুম থেকে উঠে আসি এবং দরজা খোলার জন্য ইমনকে ডাকাডাকি ও ড্রেসিংরুমের দরজায় নক করি। দরজা না খোলায় আবুলকে দিয়ে চাবি আনিয়ে দরজা খুলে আমরা দেখি ইমন ফ্যানের সঙ্গে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছে। আমরা তখন চিৎকার করতে থাকি। আমি ও মনোয়ারা মিলে ইমনকে পায়ের দিক থেকে আলগাইয়া ধরি। ড্রেসিংরুমে থাকা অ্যালুমিনিয়ামের মই আবুল ধরে এবং ডলি মই বেয়ে ওপরে উঠে বঁটি দিয়ে ইমনের গলার রশি কেটে দেয়। রশিটি স্কিপিং রোপ ও আয়রন কর্ড দিয়ে বানানো ছিল। আমরা ইমনকে ফ্লোরে নামিয়ে রাখি। দোকান থেকে সরিষার তেল এনে গরম করে ইমনের হাতে পায়ে ও শরীরে মালিশ করি। ইমনের মলদ্বার দিয়ে মল ও প্রস্রাব নির্গত হওয়ায় আবুল ও ডলি ইমনের প্যান্ট পাল্টিয়ে দেয়। তখন আবুল ইমনের প্যান্টের পকেট থেকে একটি চিরকুট পায়। এর মধ্যে রমনা থানার ওসিসহ পুলিশ আমাদের বাসায় আসে। আবুল ইমনের পকেটে পাওয়া চিরকুট আমার হাতে দিয়ে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় আমি পুলিশের হাতে সেই চিরকুট দিয়ে দিই। পাশের বাসার সালমান হোসেনসহ প্রতিবেশীরা সবাই এসেছিল। পাশের ক্লিনিক থেকে ডাক্তার ডেকে আনা হয়েছিল। ডাক্তার ইমনকে দেখে বলেছিল যে ইমন আর বেঁচে নেই। এরই মধ্যে আমার শ^শুর-শাশুড়ি ও দেবর বিল্টু আসেন। আমার শাশুড়ি চিৎকার দিয়ে আমাকে বলেন যে, ‘তুই, আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছিস। তোকে আর বাঁচতে দেব না।’ সে আমাকে গালাগালি করার সময় ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। তখন আমি ভয়ে পাশের ইয়াসমিন আন্টির কাছে গিয়ে দাঁড়াই। তখন তিনি ইয়াসমিন আন্টির সঙ্গে আমাকে নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দেন। ওই সময় বাদল খন্দকার, মতিন রহমান, শাহ আলম কিরণ, মোহাম্মদ সেলিম এবং পাশের বাসার সুইটি ভাবি ও তার স্বামী সালমানসহ সবাই উপস্থিত ছিলেন। ইমনকে তখন সবাই মিলে সেখান থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন পুলিশের বজলুল করিম সাহেব ও রমনা থানার ওসি আমার বাসায় তাদের টিম নিয়ে তল্লাশি করে এবং আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ইমনকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। ইমনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
সেদিন বাদল খন্দকারসহ আরও অনেকের সামনে ইমনের ভাই বিল্টু তার গলা চেপে ধরে মারধর করেছিল উল্লেখ করে সামিরা বলেন, ‘আমার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসেছিল এবং আমাকে সেদিন বিল্টুর হাত থেকে রক্ষা করেছিল। বিল্টু আমার বাসায় তালা লাগিয়ে আমাকে বাসা থেকে বের করে দিলে আমি নিচতলায় ঝুমি ও ঊর্মিদের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ওনারা ফোন করে আমার বাবা-মাকে সংবাদ দিলে ওই দিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার দিকে আমার বাবা-মা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্যক্রম শেষে এফডিসি থেকে ইমনের লাশ গ্রিন রোডের বাসায় নিয়ে যায়। ইমনের লাশ সিলেটে যাওয়ার সময় আমার শ্বশুর ও মামাশ্বশুর আলমগীর কুমকুম আমার কাছে এসেছিলেন। আমার শ্বশুর আমাকে জড়িয়ে ধরেন এবং সিলেট যেতে নিষেধ করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সিলেট গেলে সেখানে আমার সমস্যা হতে পারে। তবে আমার মামাশ্বশুর আলমগীর কুমকুম আমাকে লাশের সঙ্গে সিলেট যেতে বলেছিলেন। আমার মামাশ্বশুরের কথায় ইমনের লাশের সঙ্গে সিলেট যাইনি। পরে আমি ইস্কাটন থেকে আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে ধানমন্ডিতে আমার ফুপা অ্যাডভোকেট জুলমত আলী খানের বাসায় যাই। ইমনকে সিলেট হযরত শাহজালালের মাজার শরিফ কবরস্থানে দাফন করা হয়। ঘটনার এক সপ্তাহ পর আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের সুইটি আমাকে ফোন করে জানায় যে বাসায় আমার শ^শুর-শাশুড়ি, আমার দেবর বিল্টুসহ আরও লোকজন নিয়ে বিভিন্ন সময় আসা-যাওয়া করছে এবং বাসার বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। আমি এই সংবাদ পেয়ে আমার বাবাকে ঘটনাটি জানাই। আমার বাবা পুলিশকে ঘটনাটি জানালে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে বাসাটি সিলগালা করে। ইমন মারা যাওয়ার তিন মাস পর আমি আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে চট্টগ্রাম চলে যাই। এরপর ১৯৯৯ সালের ৫ মার্চ মুস্তাক ওয়াইজের সঙ্গে পারিবারিকভাবে আমার পুনরায় বিয়ে হয়।’
সূত্র: দেশ রূপান্তর