শেরপুর জেলা কে সারাদেশের মধ্যে অন্যতম শান্তি প্রিয় জেলা গড়তে সবার সহযোগিতা চাইলেন শেরপুরের নবাগত জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন। তিনি সভা শুরুর প্রথমেই জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দলনে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নিরবতা পালন করে আজ মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ রজনীগন্ধায় আয়োজিত জন প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় ওই সহযোগিতা কামনা করেন। ওইসময় তিনি বলেন, পাহাড়, নদী, পর্যটন ও শস্যভান্ডার খ্যাত ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক শেরপুরের রয়েছে অনেক সম্ভাবনা আর এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজকে সব ধরণের বাধা বিপত্তি ভূলে একত্রে কাজ করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় নবাগত জেলা প্রশাসক সবার সাথে পরিচিত হন এবং শেরপুরের উন্নয়ন ও সমস্যা নিয়ে পরামর্শ আহবান করেন। ওইসময় নানা বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন, ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার নজরুল ইসলাম, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মোঃ মাছুদ মিয়া, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি মোঃ আমজাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান, জেলা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার মোঃ জিন্নাত আলী, জেলা রেড ক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল মজিদ খোকন, জেলা ইউপি চেয়ারম্যান ফোরামের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, প্রেসক্লাব সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার, সাধারণ সম্পাদক সাবিহা জামান শাপলা, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য, জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান শামছুন্নাহার কামাল, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কোহিনুর বেগম বিদ্যুৎ, জেলা পরিষদ সদস্য সাব্বির আহমেদ খোকন, সাপ্তাহিক দশকাহনীয়া সম্পাদক মুহাম্মদ আবু বকর, বাংলার কাগজ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির, সাংবাদিক জিএম আজফার বাবুল, সঞ্জীব চন্দ বিল্টু, হাকিম বাবুলসহ ২১ জন বক্তা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এটিএম জিয়াউল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহ্ম্মাদ আরিফুল ইসলামসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময়ে অংশ নেওয়া বিভিন্নজনের মতামতে উঠে আসে শেরপুরের বিভিন্ন সম্ভাবনা ও সমস্যার চিত্র। তারা বলেন, শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতে মধুটিলা ও গজনী ইকোপার্ক ছাড়াও পানিহাতা, রাজাপাহাড়সহ সম্ভাবনাময় অনেক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার অনেক সম্ভাবনাময় স্থান রয়েছে। এগুলো পরিকল্পনামাফিক উন্নয়ন করা গেলে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। শেরপুরের উৎপাদিত চিকন চাল রপ্তানী, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সীমান্তে বন্যহাতির উপদ্রব থেকে জান-মাল রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেন। পলিথিনমুক্ত, যানজটমুক্ত, ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাত দখলমুক্তকরণ, মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকান্ড জোরদারকরণে অনেকেই জোর দেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী সংগ্রাম কমিটির অফিস সংরক্ষণ, আহাম্মদনগর,নাকুগাঁও, জগৎপুর, সূর্যদী বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানানো হয়। বাল্যবিয়ে নিরোধ ও শেরপুরের প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান।
জেলা প্রশাসক সকলের কথা ধৈর্য সহকারে শুনেন এবং এসব বিষয়ে প্রশাসনিক পর্যায়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। প্রয়োজনে বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর ও সুধীবৃন্দের সাথে আরও মতবিনিময় করে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
এর আগে দুপুরে নবাগত জেলা প্রশাসক জেলার বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে এক পৃথক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।