শেরপুর তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহের শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সর্বোচ্চ খেতাব প্রাপ্ত একমাত্র বীর বিক্রম (মরনোত্তর) শহীদ শাহ মু’তাসিম বিল্লাহ খুররম। তিনি ১৯৫৩ সালের ২ জুলাই শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া গ্রামে এক স¤্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা শাহ মো. মোশারাফ হোসেন ও মা বেগম ফজিলাতুন্নেছার চার ছেলে ও সাত মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। ছোট বেলা থেকেই তার মধ্যে ছিল একজন আদর্শ মানুষের চরিত্রের সমস্ত গুনাবলি। তিনি ছিলেন সদালাপী, ন্যায়নিষ্ঠ ও পরোপকারী। ছাত্র হিসেবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তিনি প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছিলেন। শেরপুর জি কে পিএম ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাশের পর তিনি রংপুর সরকারী কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন। পড়াশোনোর পাশাপাশি সাহিত্য কর্মেও ছিল তার অবাধ বিচরণ। তিনি কারমাইকেল কলেজ বার্ষিকী ইংরেজী বিভাগের সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭০ সালে কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর তিনি পারিবারিক কারণে শেরপুর কলেজে বিএসসি ক্লাসে ভর্তি হন। এসময় মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তিনি মহান মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর শেরপুর শত্রুমুক্ত হওয়ার পরও সমগ্র দেশ মুক্ত করার প্রবল আগ্রহ ও নেশা ছিল এই বীরের। তিনি ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র পাঁচদিন আগে জামালপুর শত্রুমুক্ত হওয়ার দিন হানাদার পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে জামালপুরের অদুরে পাকুটিয়া নামক স্থানে শাহাদাৎ বরণ করেন। শত্রুর মর্টাসেলের আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় শহীদ খুররমের সমস্ত শরীর। বুকের তাজা রক্তে এই বীর এঁকে দিলেন বাংলাদেশের মানচিত্র, উড়িয়ে গেলেন স্বাধীনতার পতাকা। শাহাদাৎ বরণকালে তার বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর ৫ মাস। স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম (মরনোত্তর) খেতাবে ভূষিত করেন। সম্ভবত বীর বিক্রম খেতাব প্রাপ্তদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্টতম বীর বিক্রম। তার স্মৃতির স্বরণে শ্রীবরদী পৌর অডিটরিয়ামের নাম করণ করা হয়েছে শহীদ শাহ মু’তাসিম বিল্লাহ খুররম বীর বিক্রম স্মৃতি অডিটরিয়াম ।
শেরপুর টাইমস/ বা.স