
মাহমুদুর রহমান সুজয়: আমরা এলিয়েন বা ভীনগ্রহের প্রানীদের নিয়ে অনেক গল্প পড়েছি, হলিউডের কত মুভি রয়েছে এলিয়েন নিয়ে , সেখানে দেখেছি এলিয়েনরা ভীনগ্রহ থেকে এসে মানবজাতি ধ্বংস করার জন্য আমাদের চেয়েও উন্নত সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে চারপাশের সবকিছু ধ্বংস করতে থাকে, আমার কাছে করোনাকেও কেন যেন সিনেমার সেই এলিয়েনদের মতই মনে হচ্ছে, চিনি না জানি না হঠাত করে একটি শত্রু আমাদের এমন ভাবে আক্রমন করে চলেছে যার শক্তির সামনে আমাদের তৈরিকরা কোন অস্ত্রই কাজে আসছে না ।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে শত শত, আমাদের কারো যেন কিছু করার নেই , তারপরো আমাদের সামনে দাড়িয়ে থেকে যারা এই অজানা শত্রুদের পরাজিত করতে দিনরাত প্ররিশ্রম করে যাচ্ছে তারা এই যুদ্ধটা শেষ হওয়া পর্যন্ত আমাদের টিকে থাকার কিছু পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন ।
তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যেমন ঘরে থাকা, সামাজিত দূরত্ব বজায় রাখা, বারবার সামবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া । বেঁচে থাকার প্রশ্নে কাজগুলো খুব সহজ হলেও অজানা অদ্ভুত এক কারনে আমাদের দিয়ে সেগুলো পালন করা কেনযেন একদমই সম্ভব হচ্ছে না ! কিন্তু কেন ? নিষিদ্ধ বিষয়গুলোতে মানবজাতির অতি আগ্রহ থাকার সহজাত স্বভাবই কি এর কারন ? নাকি আমাদের ভোতা অনুভূতির কারনে এমন হচ্ছে ?
এখানে আমি একটি ঘটনা বলবো, “খুবই যৌক্তিক ও সঙ্গত কারনে গত দশ পনেরো দিন আগে আমি একটি গ্রামে গিয়েছিলাম , সেখানে এক মসজিদে মাগরিবের আজানের পর মসজিদের মাইকে জনসমাগম না করার অনুরোধ ক্রমে একটি ঘোষনা হচ্ছিলো , আমি ঘোষনাটি মনযোগ দিয়ে শুনার চেষ্টা করছিলাম পাশে এক মুরুব্বিও মনে হয় ঘোষনাটি মন দিয়ে শুনছিলেন, ঘোষনার শেষে যখন অনুরোধ ক্রমে ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যানের নাম ঘোষনা করা হলো
তখন মুরুব্বি লোকটি খুবই তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো “অহ চেরম্যন কইছে ওর কাত কে হুনে?”। ভদ্রলোকের মন্তব্যটি শুনে সেদিন আমি আতকে উঠেছিলাম, আমাদের দেশের মানুষ রাজনৈতিক সচেতন জানি কিন্তু বিভক্তির রাজনীতি যে জীবনকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে এটা জানা ছিলো না, খুব আগ্রহ থেকে উনাকে জিজ্ঞাস করলাম , “মুরুব্বি আপনি এটা কি বললেন? আপনি কি বিশ্বের বর্তমান অবস্থা জানেন? উত্তরে মুরুব্বি যা বললো তার সারমর্ম হচ্ছে“আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে হাত মিলিয়ে ক্ষমতা পাকা করার জন্য করোনা নামে এই সব ছড়াচ্ছে, আসলে করোনা বলতে পৃথিবীতে কিছুই নাই, আর মসজিদ বন্ধ করার পেছনে ইহুদিদের চক্রান্ত চলছে” আসলে এমন ঘটনা বা বিশ্বাস যে শুধু ঐ এক মুরুব্বির মনেই আছে ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয় , এমন হাজারো পরিবারের কর্তা আছেন যারা দিনশেষ ঘরের আলোচনায় সবার সাথে এভাবেই করোনাকে ব্যাখা করেন ।
যদি প্রশ্ন করি, এত সময় পাওয়ার পরও আমরা কেন প্রান্তিক এই মানুষগুলোকে সচেতন করতে পারলাম না ? যারা সচেতন করবেন তারাই বিষয়টির ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন নয় এটা কি আমার প্রশ্নের উত্তর হতে পারে ? হয়তবা , যাইহোক আমি এখন আরেকটি বাস্তব পরিস্থিতি বলি “খুবই সঙ্গত কারনে গত সপ্তায় আমি একটি সরকারী ব্যাংক এ গিয়েছিলাম এই ভেবে যে, সেখানে নিশ্চয় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চত করে উনারা ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছেন , কিন্তু গিয়ে দেখি একি কান্ড, পায়ের নিচে গোল বৃত্ত থাকা সত্বেও তার কোন তোয়াক্কা না করে সবাই চাপাচাপি করে লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে” এমন চিত্র দেশের প্রতিটি ব্যাংক এর সামনে কিনা আমি জানি না , তবে প্রতিটি বাজারে যে এখনো ভিড় হয় তা আমরা সবাই জানি , মসজিদের কথা যদি বলি; সরকারি প্রতিষ্ঠানের মসজিদ ব্যাতিত কোন মসজিদে ধর্ম মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা মেনে নামাজ আদায় হচ্ছে এমনটা ভাবার কোন কারন নেই , জানাজা নামাজের কথা বলবেন ? সেটা আজ ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় তো আমরা দেখেছি , মজার ব্যাপার; একটি অনলাইন পত্রিকায় প্রাসঙ্গিক একটি নিউজে দেখলাম সেখানকার পুলিশের একজন কর্মকর্তা দাবী করেছেন হুজুরের জানাজায় সবাই নাকি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন ।
এত এত সব অসেচতনার মাঝেও কোথাও যেন আমি একটু আলোর সন্ধান পাই , সিনেমায় যেমন এলিয়েনদের হারিয়ে একসময় মানবজাতির বিজয় হয় তেমনি কিছু একটা হয়ত খুব দ্রুত হবে ।শত এই অসচেতনতায় ব্যাপারটা কঠিন হবে, তারপরো আমরা পারবো শক্তি দিয়ে নয় বুদ্ধি দিয়ে , মানবজাতি বুদ্ধির জন্যই তো শ্রেষ্ঠ