রাজধানীর বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-ডিপিডিসি তার আওতাভুক্ত এলাকাগুলোতে দিনে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
কোন কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং হবে, সেটি অনলাইনে দিয়েছে সংস্থাটি। তবে সোমবার পোস্ট হওয়ার পর ক্লিক করে তালিকায় ঢোকা যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের ধারণসক্ষমতার বেশি ক্লিক পড়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম অনুষঙ্গ জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সূচি অনুযায়ী লোডশেডিং দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা আগেই জানিয়েছে সরকার। দিনে এলাকাভিত্তিক সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়েছে।
এই ঘোষণা অনুযায়ী বিদ্যুৎ কখন কোথায় লোডশেডিং হবে- সেই সূচি নির্ধারণ করেছে বিতরণ সংস্থাগুলো, যা কার্যকর হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার।
ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামীকাল থেকে চালু হবে সূচি অনুযায়ী লোডশেডিং। প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং রাখা হয়েছে সূচিতে। ফলে সারা দিনে যেকোনো এক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকবে আমাদের গ্রাহকরা।’
ঢাকা ও আশপাশের ৩৬টি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ডিপিডিসি। ঢাকার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎসেবা দিচ্ছে: আদাবর, আজিমপুর, বনশ্রী, বাংলাবাজার, বংশাল, বাসাবো, ডেমরা, ধানমন্ডি, ঝিগাতলা, জুরাইন, কাকরাইল, কামরাঙ্গীরচর, খিলগাঁও, লালবাগ, মানিকনগর, মাতুয়াইল, মগবাজার, মতিঝিল, মুগদাপাড়া, নারিন্দা, পরীবাগ, পোস্তগোলা, রাজারবাগ, রমনা, সাতমসজিদ, শ্যামলী, শেরেবাংলা নগর, শ্যামপুর, স্বামীবাগ ও তেজগাঁও এলাকায়।
আর নারায়ণগঞ্জের মধ্যে আছে: ফতুল্লা, কাজলা, পূর্ব ও পশ্চিম নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও শীতলক্ষ্যা।
তবে গ্রাহকরা সাশ্রয়ী হলে লোডশেডিং শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব বলেও মনে করেন ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাই সবাইকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘ভোক্তারা সাশ্রয়ী হলে লোডশেডিং শূন্যে নিয়ে আসা সম্ভব। কোনো ঘরে যদি ১০টি লাইট থাকে, প্রয়োজন ছাড়া সবগুলো যদি ব্যবহার না করে, তাহলেই বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। অপ্রয়োজনে বিদ্যুৎ খরচ না করলেও লোডশেডিং না দিয়েও গ্রাহককে সেবা দেয়া সম্ভব।’
জ্বালানি তেল ও গ্যাসের আমদানি মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার রয়েসয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বিদ্যুতের যাওয়া-আসার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।
কয়েক বছর ধরে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের অভ্যাসের কারণে বিদ্যুতের যাওয়া-আসা মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে, সামাজিকমাধ্যমে অসন্তোষের কথা তুলেও ধরছেন হাজারো মানুষ।
সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য, বিশেষ করে এলএনজির দামে লাফ, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়লা সরবরাহে বিঘ্নের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হয়েছে।
পাওয়ার সেলের তথ্যানুযায়ী, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সেই জায়গায় উৎপাদন হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত।
জ্বালানি তেলের দাম বেশি বলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং কোভিড-পরবর্তী চাহিদা বাড়ায় আগামী কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়তির দিকে থাকবে বলেই পূর্বাভাস আছে।
গত এক যুগে বিদ্যুৎ খাতে নানা পদক্ষেপের পরও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির কারণে লোডশেডিং ফিরে আসার পর অসন্তোষের মধ্যে গত ৫ জুলাই এই সংকটের কারণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওইদিন সরকারপ্রধান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাসসহ বিদ্যুৎ তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে পরিবহনব্যবস্থায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশেই বিদ্যুতের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছে।
#নিউজবাংলা