রাখাইনে আগস্টের অভিযানের সময় রোহিঙ্গা নারীদের ওপর গণধর্ষণসহ নানা ধরনের যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে মিয়ানমারের সেনাসদস্যরা। এমনও অভিযোগ রয়েছে রোহিঙ্গা নারীদের ক্যাম্পে আটকে রেখে উপর্যুপরী ধর্ষণ করেছে সেনারা। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমীলা প্যাটেন রোববার ঢাকাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান। খবর চ্যানেল নিউজ এশিয়া। রাখাইনে রোহিঙ্গা নারীদের ওপর কী ধরনের যৌন নিপীড়ন হয়েছে, তার মাত্রা বুঝতে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন প্রমীলা প্যাটেন। তবে মিয়ানমার সরকার তাকে রাখাইনে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।
জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমীলা প্যাটেন বলেন, ‘বেঁচে যাওয়া এক নারীর কাছে শুনেছি, মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী তাকে ৪৫ দিন আটকে রেখেছিল। এ সময়টাতে তাকে পালা করে ধর্ষণ করা হয়। অনেকে এখনো শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন। বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপরাধে জড়িত এবং তাদের নির্দেশদাতা কিংবা তাদের ক্ষমাদানকারীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।’ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতায় তার মনে হয়েছে, জাতি ও বর্ণ বিবেচনায় নিয়ে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নসহ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ব্যাপকভাবে নৃশংসতা চালানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে তাদের প্রকাশ্যে নগ্ন করে হেয় করা এবং সেনাবাহিনীর যৌনদাসে পরিণত করার দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথাও শুনেছেন প্রমীলা প্যাটেন। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি জানান, রোহিঙ্গা নারীদের সবাই তার কাছে অপরাধীদের শাস্তি চেয়েছেন। নৃশংসতার জন্য তারা একজন সৈন্যকেও নিষ্কৃতি দিতে রাজি নন। প্রমীলা প্যাটেন মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোতে জোর দেওয়ার পাশাপাশি এ ধরনের অপরাধ তদন্তে নিরাপত্তা পরিষদে একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নের বিষয়টি তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সভাপতির কাছে তুলে ধরার কথা উল্লেখ করেন। নাগরিকত্বসহ অন্যদের মতো একই মর্যাদা পাওয়ার শর্তে রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ তার কাছে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। যদিও ছাই ছাড়া তাদের আর কিছুই ফিরে পাওয়ার নেই। রোহিঙ্গা এক নারীকে উদ্ধৃত করে প্রমীলা প্যাটেন বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। আমাদের দায়িত্ব নেওয়ার মতো একজন নেতা চাই। আর এমন একটা নিরাপদ জায়গা চাই।’ প্রমীলা প্যাটেন বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ সফরে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে যা জেনেছেন, নিউইয়র্কে ফিরে গিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে তা তিনি তুলে ধরবেন। আগামী বছরের মার্চে তার দপ্তর সহিংসতায় যৌন নিপীড়নের বিষয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। ওই প্রতিবেদনে মিয়ানমার নিয়ে আলাদা একটি অধ্যায় থাকছে। প্রমীলা প্যাটেন জানান, ইতিহাসে বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকা স্মরণ করা হবে। এ সংকট থেকে বেঁচে যাওয়া লোকজনকে সহায়তার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তার দপ্তর সহযোগিতার জন্য তৈরি আছে। প্রমীলা প্যাটেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের মধ্যে আছে অপরাধীদের দায়বদ্ধতার আওতায় আনা। নিপীড়তদের জানাতে চাই, তারা একা নন। এ ছাড়া বাংলাদেশকেও বলতে চাই, তাদের সহায়তায় বাংলাদেশ একা নয়।’
সুত্র: আমাদের সময় অনলাইন।