শেরপুরে রেল লাইন স্থাপনের দাবীতে সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ঝড় উঠেছে। এদিকে একই দাবীতে আগামী ৩১ জানুয়ারী সকাল ১১ টায় শেরপুরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে শতপদী পদ যাত্রা ও স্মারক লিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষনা করেছে জনউদ্যোগ নামের একটি নাগরিক সংগঠন ।
দীর্ঘদিন যাবৎ সম্ভাবনাময় শেরপুর জেলার পর্যটন শিল্পের বিকাশ, নাকুগাঁও স্থল বন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়ন, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করার লক্ষ্যে এ অঞ্চলের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়ী মহলসহ সর্বস্তরের জনসাধারনের পক্ষ থেকে রেল লাইন স্থাপনের দাবী জানিয়ে আসছিল। সেই দাবীর প্রেক্ষিতে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ২০১৪ সালের ৮জুন জামালপুরের পিয়ারপুর স্টেশনে আন্তঃনগর তিস্তা ট্রেনের আনুষ্ঠানিক যাত্রাবিরতির উদ্বোধন শেষে এক জনসভায় পিয়ারপুর থেকে শেরপুরে রেলপথ স্থাপনের ঘোষণা দেন।
সেই ঘোষনা ও রেলওয়ের একটি সূত্রে জানা যায়, জামালপুর জেলার পিয়ারপুর রেলস্টেশন থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দিয়ে শেরপুর জেলা শহর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার রেল লাইনের প্রাথমিক সম্ভাব্যতায় ৫৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ওই সময়ের রেলওয়ের ডিজি তোফাজ্জল হোসেন শেরপুরে নতুন রেললাইন স্থাপন সিদ্ধান্তের বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে ওই সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, “শেরপুরে রেললাইন স্থাপন করার জন্য সব সার্ভে শেষ করা হয়েছে। এ সরকারের আমলেই শেরপুরে রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ করা হবে।”
তথ্যমতে, শেরপুর জেলার উপর দিয়ে রেলপথ স্থাপন করার ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩০-এর দশকে প্রথম পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রদেশের সাথে পণ্য পরিবহণ ও যাত্রী সাধারণের যাতায়াত সুবিধার জন্য জামালপুর রেলওয়ে জংশন থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর দিয়ে শেরপুর জেলা সদর (তৎকালে শেরপুর থানা) হয়ে সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার (তৎকালে ঝিনাইগাতী ইউনিয়ন) রাংটিয়া পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনে প্রাথমিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর রেলপথ স্থাপনের বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে তৎকালীন বাংলাদেশ রেলওয়ে পুনরায় জামালপুর-রাংটিয়া ভায়া শেরপুর রেলপথ স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করে। কিন্তু সেই সম্ভাব্য যাচাই বাছাই এর কাজ আর আলোর মুখ দেখেনি।
৭০ এর যাচাই বাছাই এবং রেলমন্ত্রীর ঘোষনার পরেও কেটে গেছে বহুদিন। গতবছরের ডিসেম্বর থেকে শেরপুরে রেল লাইন স্থাপন নিয়ে আবারো সরব হয় ফেসবুকসহ অনলাইন গণমাধ্যমগুলো। ইতোমধ্যে রেল লাইন স্থাপনের দাবীতে শ্রীবরদীতে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সাথে আগামী ৩১ জানুয়ারী শতপদী পদ যাত্রা ও স্মারক লিপি প্রদানে সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়িক সংগঠনের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনসাধারনকে জনউদ্যোগের আয়োজনে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।