বাংলাদেশ রেলওয়ের যোগাযোগ উন্নয়নে কারিগরি প্রকল্প একের পর এক প্রশ্ন তৈরি করে চলেছে। প্রথমে প্রশ্ন উঠেছিল একজন ক্লিনারের মাসিক বেতন ৪ লাখ ২০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন কর্মচারীর অবাস্তব বেতন কাঠামো নিয়ে।
এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। এ কেমন কথা! ক্লিনারের বেতন ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা! স্বাভাবিক কারণেই এ ধরনের উদ্ভট বিষয়সংবলিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবটি ফেরত নেয়ার পর পুনরায় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু সংশোধনী প্রস্তাবটিও পড়ে প্রশ্নের মুখে। এবার আন্তর্জাতিক পরামর্শকদের মাসিক বেতন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এ ক্ষেত্রে অত্যধিক ব্যয় প্রাক্কলন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় পরামর্শকের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। উল্লেখ্য, প্রকল্পে আন্তর্জাতিক পরামর্শকদের মাসিক বেতন ধরা হয়েছে ২৫ লাখ থেকে শুরু করে গড়ে ১৬ লাখ টাকা। এই অঙ্ক অত্যধিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের দৃষ্টিতে। হওয়ারই কথা।
অথচ এর পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সেই যুক্তি যে ধোপে টেকেনি, সেটাই স্বাভাবিক। শেষ পর্যন্ত যৌক্তিকভাবে ব্যয় হ্রাসের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর কোনো কোনো ব্যয় কমানো হয়েছে এবং পরে মূল প্রকল্পে নেয়া হবে বলে কিছু পরামর্শক বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে। শুধু পরামর্শক বিষয়েই নয়, এর বাইরে বিবিধ ব্যয় ৮৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং ইন্টারেস্ট ডিউরিং ইমপ্লিমেন্টেশন বাবদ প্রস্তাবিত ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
রেলব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে- এটি নিঃসন্দেহে সুখবর। জরাজীর্ণ রেলব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হলে নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিতেই হবে। কিন্তু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা যেভাবে তাদের প্রস্তাব তৈরি করছেন, তা শুধু অপচয়েরই নামান্তর নয়, তাদের সদিচ্ছাও তাতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। রেলওয়ের প্রকল্প তো শ্বেতহস্তী নয় যে, যাচ্ছেতাইভাবে খরচ করে তাকে পুষতে হবে।
সরকারি টাকার অপচয় একটি সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফর সেগুলোর একটি। বিদেশে প্রশিক্ষণ বাবদ যত টাকা খরচ হয়, সেই পরিমাণ টাকার বিনিময়ে কতটা দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা অর্জিত হয়, তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। অপ্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পরামর্শকদের অস্বাভাবিক হারে বেতন দেয়ার রীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এমনিতেই একটি লোকসানি সংস্থা। এর প্রতিটি টাকাই ব্যয় করতে হবে যৌক্তিকভাবে।