আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) দৈহিক শক্তি এবং পেশীবলের দিক দিয়ে এতো শক্তিশালী এবং সুদৃঢ় ছিলেন যে, বিশ্বখ্যাত কোনো কুস্তিগীড়ও উনার সামনে টিকতে পারতো না।
মোহাম্মদ ইবনে ইসহাক (র.) এর কিতাবে বর্ণিত – মহানবী (সা.) সময়ে মক্কায় রুকানা নামক একজন পালোয়ান ছিল। সে কুস্তিতে বিশেষ পারদর্শী এবং শারীরিক শক্তিতে মক্কা নগরীতে অপ্রতিদ্বন্দ্বি এক ব্যাক্তিত্ব ছিল। দূর দুরান্ত থেকে বীর পুরুষেরা তার সঙ্গে মল্লযুদ্ধ অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আসতো। কিন্তু অবলীলাক্রমে সে তাদেরকে ধরাশায়ী করে দিতো।
একদিন ঘটনাক্রমে সে হুজুরে পাক (সা.) এর সামনে পড়ে গেলো। হুজুর (সা.) তাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে রুকানা! তুমি আল্লাহকে কেন ভয় করছ না এবং আমার দাওয়াতকে কেন কবুল করছ না? উত্তরে সে বলল, হে মোহাম্মদ! আপনার দাবীর সত্যতার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পেশ করুন । হুজুর পাক (সা.) বললেন, কুস্তিতে যদি আমি তোমাকে পরাজিত করতে পারি তবে কি তুমি ঈমান আনবে? সে বলল, হ্যাঁ। রাসূল (সা.) বললেন, তাহলে প্রস্তুত হও। কথা শুনে রুকানা পালোয়ান কুস্তির জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনোরূপ প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন না। তিনি সাধারণ পোশাক – লু্ঙ্গি ও চাদর পরিহিত অবস্হায় ছিলেন। প্রথম আক্রমণেই রাসূল (সা.) রুকানাকে মাটিতে ফেলে দিলেন। রুকানার বিস্ময়রে অবধি রইল না। হুজুর (সা.) তাকে এমনভাবে ধরলেন যে, তার নড়াচড়া করার কোনো উপায় রইল না। ছেড়ে দেয়ার আবেদন করলে প্রিয় নবী (সা.) তাকে ছেড়ে দিলেন। এরপর সে দ্বিতীয়বার এবং তৃতীয়বার কুস্তি লড়ল। কিন্তু প্রতিবারই তাকে পরাজয়ের গ্লানি ভোগ করতে হলো। প্রতিবারেই হুজুর (সা.) তাকে ধরাশায়ী করে দিলেন। এতে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে রুকানা বলল, আপনি এক আজিব শান! এতো শক্তির অধিকারী আপনি? তবে শেষ পর্যন্ত সে ঈমান আনয়ন করেছিল কিনা তার বর্ণনা হাদিস শরিফে আসেনি।
উক্ত কুস্তিগীর রুকানা ব্যতীত আরো অন্যান্য কুস্তীগীররাও হুজুর (সা.) এর সঙ্গে মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। তিনি (সা.) সকলকেই পরাজিত করেছিলেন। আবূল আশাদ জাহমী নামে এক শক্তিশালী লোক ছিল আরবে । তার শারীরিক শক্তি এত বেশি ছিল যে, সে গরুর চামড়ার ওপর দাড়িয়ে যেতো। লোকেরা তার চর্তুদিক দিয়ে তাদের গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে চামড়া টানাটানি করত। টানের চোটে চামড়া ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতো কিন্ত তার পায়ের নীচ থেকে চামড়া সরিয়ে নিতে পারতো না। সে স্বস্হান থেকে একটু বিচ্যুত হত না। একদিন সে রাসূল (সা.)- কে বলল, আপনি যদি আমাকে জমিনে ফেলে দিতে পারেন তবে আমি ঈমান আনবো। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে ধরেই জমিনে ফেলে দিলেন। কিন্তু হতভাগা এরপরও ঈমান আনলো না।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এক রাত্রিতে উনার এগার জন স্ত্রীর নিকট গমণ করতে পারতেন । বর্ণনাকারী বলেন, আমি হজরত আনাস (রা.)-কে সবিস্ময়ে প্রশ্ন করলাম, হুজুর (সা.) কি এতই শক্তি রাখতেন? হজরত আনাস (রা.) বললেন, আমরা পরষ্পর বলাবলি করতাম , রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে আল্লাহ তায়ালা তিরিশজন পুরুষের শক্তি প্রদান করেছেন।
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, একদা হজরত জিব্রাঈল (আ.) খাবার ভর্তি একটি ডেগ আমার কাছে নিয়ে এলেন। আমি তা থেকে কিছু খাবার গ্রহণ করলাম। তাতে আমার ভেতর চল্লিশজন পুরুষের পুরুষত্ব শক্তি এসে গেল।
রাসূল পাক (সা.) এর পানাহার এবং জীবন যাপনের অবস্হা এরকম ছিল যে, কখনো তিনি উদরপূর্তি করে পরিতৃপ্তির সঙ্গে খাদ্য গ্রহণ করেননি। শুধুমাত্র যবের রুটিই যথেষ্ট মনে করতেন। পানাহারের অবস্হা এরকম হওয়া সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পবিত্র দৈহিক শক্তি ও সামর্থ্যের উপরোক্ত অবস্হাবলী উনার মোজেজার মধ্যেই গণ্য হয়ে থাকে।
সূত্র: মাদরিজ উন নবূয়ত । শায়েখ আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহ.)। (প্রথম খন্ড)।