সুমন কুমার চক্রবর্ত্তী : বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় যোগ্যতাভিত্তিক পাঠ্যক্রমে পাঠদান করা হয়।পরীক্ষাগুলোতেও যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন করা হয়।এই পাঠক্রম সম্পর্কে ধারনা না থাকার কারনে পাঠদানে সমস্যা তৈরী হয়।পাল্লা দিয়ে বাড়ে গাইড বই ও কোচিং সেন্টার নির্ভরতা।অথচ এই বিষয়টি তেমন কোন বিষয়ই না, যদিও এটি আমাদের সম্মানিত অভিভাবকগণ কে ভাবায়।মুখস্থবিদ্যার কড়াল গ্রাস কেড়ে নেয় আমাদের শিশুদের শৈশব।শিশুরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।বাজার থেকে নাম সর্বস্ব গাইড বই কিনে শিশুদেরকে মুখস্থ করতে বাধ্য করা হয়।নষ্ট হয়ে যায় শিশু শিক্ষার ভিত।শিশুকে ভুগতে হয় তার সারাটা শিক্ষা জীবনে।তাই এ বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকা প্রয়োজন।
চলুন দেখা যাক,কী আছে যোগ্যতাভিত্তিক পাঠ্যক্রমে।
আপনারা হয়ত বেঞ্জামিন ব্লুমের নাম শুনে থাকবেন।তিনি ছিলেন বিখ্যাত আমেরিকান মনোবিদ।তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “Taxonomy of Educational objectives”এ যোগ্যতাভিত্তিক পাঠক্রমের বর্ণনা প্রদান করেন।এটি বেঞ্জামিন ব্লুম টেক্সোনমি নামে পরিচিত।
বেঞ্জামিন ব্লুম শিখনের ক্ষেত্রকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করেন।তাঁর মতে,শিখনের তিনটি ক্ষেত্রের সমন্বয়ে পুরোপুরিভাবে শিখন সম্পন্ন হয়।
1.Cognative Domain(জ্ঞানমুলক স্তর).
2.Psychomotor Domain(মনোপেশীজ স্তর).
3.Affective Domain(আবেগমুলক স্তর).
Cognative Domain:কোনকিছু পড়ে বা ছবি দেখে তার তথ্য উপস্থাপন করা,স্মরণ করতে পারা বা তথ্য বিশ্লেষন করতে পারা।
Phychomotor Domain:বর্ণিত তথ্য এবং তথ্য দ্বারা সংগঠিত মুল্যবোধ বা দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে অর্জিত দক্ষতার প্রয়োগ।
Affective Domain:
ভাবাবেগ,মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে উদ্বদ্ধু হয়ে সংশ্লিষ্ট মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়ে জীবনমান উন্নত করা।
Cognative Domain কে আবার ৬ টি উপস্তরে ভাগ করা হয়েছে।
1.Knowledge(জ্ঞানমুলক উপস্তর).
এটি কোন পঠিত বা শ্রুত তথ্য উপস্থাপন বা স্মরণ করার মানসিক প্রক্রিয়া।
2.Comprehension(উপলব্ধিমুলক উপস্তর).
এটি বিষয়বস্তু বা তথ্য উপলব্ধি করার স্তর।
3. Application(প্রয়োগমুলক উপস্তর).
অর্জিত জ্ঞান ও তথ্যের আলোকে বাস্তব কোন সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জনের উপস্তর।
4.Analysis(বিশ্লেষনমুলক উপস্তর).
এটি ভিন্ন ভিন্ন তথ্যের আলোকে সমগ্র তথ্যের অংশসমূহ পৃথক করতে পারার দক্ষতা অর্জনের উপস্তর।
5.Synthesis(সংশ্লেষণমুলক উপস্তর).
অর্জিত জ্ঞান ও তথ্যের আলোকে নতুন সমস্যার বিকল্প সমাধানে প্রস্তাব বা অর্জিত ধারনাকে নতুন পরিস্থিতিতে স্থাপন করার মানসিক প্রক্রিয়ার উপস্তর।
6.Evaluation(মূল্যায়নমুলক উপস্তর):
যে কোন বিষয় বা অর্জিত জ্ঞানের উপর মূল্য আরোপে মতামত প্রদর্শন করার দক্ষতা অর্জনের জন্য নির্ধারিত উপস্তর।
প্রাথমিকে প্রথম তিনটি উপস্তর অর্থাৎ জ্ঞান,উপলব্ধি ও প্রয়োগ এর উপর পাঠ্যবই ও কারিকুলাম তৈরী করে পাঠদান ও পরীক্ষা গ্রহন করা হয়।এটিই যোগ্যতাভিত্তিক পাঠ্যক্রম।
উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, কোন পাঠ শিক্ষার্থীকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে (শিখন শেখানো পদ্ধতি প্রয়োগ করে) প্রথম তিনটি উপস্তরের উপর টেষ্ট আইটেম তৈরী করে শিক্ষার্থী মূল্যায়নের ব্যাবস্থাটাই বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষা সিস্টেম।গাইড বই নির্ভরতা বা কোন কিছু মুখস্থ করাটা শিক্ষার্থীর উপর বিরুপ প্রভাব তৈরী করবে।
আমি একটি পাঠ নিয়ে আলোচনা করছি।
ধরুন পাঠ্য বই এ শামীম নামের একজন ছেলের পাঠ দেওয়া আছে।শামীমের তথ্য সেখানে দেওয়া আছে।পাঠদান যথাযথভাবে করানো হলো। এবার টেষ্ট আইটেম টি তৈরী করে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন করলে শতভাগ সফল পাঠদান নিশ্চিত হবে।
টেষ্ট আইটেম টি নিম্নরুপ:
ক)শামীম কোন ক্লাসে পড়ে?(জ্ঞানমূলক)
খ)শামীম কেন স্কুলে যায়?(উপলব্ধি মূলক)
গ)তুমি কেন স্কুলে যাও?(প্রয়োগমূলক)
পরিশেষে বলতে চাই,মুখস্থ বিদ্যার কড়াল গ্রাস থেকে মুক্ত হোক শিশুদের শৈশব।নিশ্চিত হোক গুণগতমানের প্রাথমিক শিক্ষা।
লেখক
সহকারী শিক্ষক
টাকিমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষক(ইংরেজী)
প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।