চলতি আইপিএলে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বোলার নাবিন উল হকের সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছিলেন ভারতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলি। শুধু কোহলি নাবিউলের সঙ্গেই নন, তর্কে জড়িয়েছেন ভারতীয় দলের সাবেক ব্যাটার গৌতম গম্ভীরের সঙ্গেও। শাস্তি হিসেবে এ দুইজনকেই জরিমানা করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। এবার সেই কারণে বোর্ডকে চিঠি দিয়েছেন কোহলি। যেখানে পুরো ম্যাচ ফি জরিমানার বিষয়টিকে তিনি অতিরিক্ত বলে উল্লেখ করেছেন!
জানা গম্ভীরের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিবাদের কারণে কোহলির এক কোটিরও বেশি টাকা জরিমানা হয়েছে। যদিও সেই টাকা তাকে বহন করতে হবে না, তার দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুই সেই জরিমানা মেটাবে বলে জানা যায়।
চলতি মাসের ১লা মে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু মুখোমুখি হয়েছিল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্ট। এই দুই বেঙ্গালুরুতেও খেলেছিল। সেবার গম্ভীর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে দর্শকদের চুপ করতে বলেছিলেন। জয়ের পর আগ্রাসীভাবে উল্লাস করতে থাকেন গম্ভীর। যা ছিল বেশ চোখে লাগার মতো।
লক্ষ্ণৌয়ে খেলতে এসে বিরাটও পাল্টা দিতে থাকেন। লক্ষ্ণৌয়ে অসংখ্য আরসিবি সমর্থকরা এসেছিলেন। তারা বিরাটকে সমর্থন করছিলেন। বিরাট তাদের আরও জোরে চিৎকার করতে উৎসাহ দেন। মাঠের মধ্যে আঙুল দেখিয়ে চুপ করতে বলেন কাউকে।
ম্যাচ শেষে উত্তেজনা আরও বাড়ে। লক্ষ্ণৌয়ের কাইল মেয়ার্স কথা বলছিলেন বিরাটের সঙ্গে। সেই সময় লক্ষ্ণৌ দলের মেন্টর গম্ভীর এসে মেয়ার্সকে সরিয়ে নিয়ে যান। সেখান থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। গম্ভীর চলে যেতে গিয়েও ফিরে আসেন। তাকে আটকে দেন লোকেশ রাহুল। কিন্তু তাকে সরিয়ে দিয়ে মারমুখী ভঙ্গিতে এগিয়ে যান গম্ভীর। উল্টো দিক থেকে আসেন বিরাটও। তিনিও উত্তপ্তভাবে কথা বলতে থাকেন। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে দুই দলের বাকি ক্রিকেটাররা তাদের সরিয়ে নিয়ে যান।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে দেখে সেখানে এসে উপস্থিত হন দু’দলের বাকি ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফরা। কোহলি ও গম্ভীর দু’জনেই দিল্লির। লক্ষ্ণৌয়ের স্পিনার অমিত মিশ্র ও সহকারী কোচ বিজয় দাহিয়াও দিল্লির হয়ে খেলেছেন। সেই কারণে তারা কোহলি, গম্ভীরকে ভালো ভাবে চেনেন। তারাই বেশি উদ্যোগী হয়ে দু’জনকে আলাদা করেন। লক্ষ্ণৌয়ের অধিনায়ক লোকেশ রাহুলও ছিলেন সেখানে। কোহলিকে সরিয়ে নিয়ে যান আরসিবির অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসিস।
কিন্তু সেখানেই সব থেমে যায়নি। তিনি যে গম্ভীরের কথা ভাল ভাবে নেননি সেটা কোহলির চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। বাউন্ডারির ধারে দাঁড়িয়ে রাহুলের সঙ্গে অনেক ক্ষণ কথা বলেন তিনি। ঠিক সেই সময় সেখানে উপস্থিত হন লক্ষ্ণৌয়ের মালিক সঞ্জীব গোয়েনকা। তার সঙ্গে অবশ্য হাত মেলান কোহলি।
কী কথা হয়েছিল বিরাট এবং গম্ভীরের? তাও ফাঁস হয়ে যায়। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সে দিন ঝামেলার সময় কী কথা হয়েছিল কোহলি এবং গম্ভীরের। গম্ভীরই আগে কোহলির উদ্দেশে বলেন, ‘‘কী বলছিস বল।’’ জবাবে কোহলি বলেন, ‘‘আমি আপনাকে কিছু বলিনি। আপনি কেন শুধু শুধু এর মধ্যে ঢুকছেন।’’
এর পর গম্ভীর বলেন, ‘‘তুই আমার কোনও খেলোয়াড়কে বলেছিস মানে তুই আমার পরিবারকে গালাগালি দিয়েছিস।’’ এর জবাবে কোহলি বলেন, ‘‘তা হলে আপনি আপনার পরিবারকে সামলে রাখুন।’’
কোহলির উত্তর শুনে গম্ভীর আবার বলেন, ‘‘তা হলে এখন তুই আমাকে শেখাবি?’’
এই ঘটনায় ম্যাচ ফি-র পুরোটাই জরিমানা হয় বিরাটের। একই শাস্তি পেতে হয় গম্ভীরকেও।
বিবাদের জেরে কেবল কোহলিই নন, ম্যাচ ফির শতভাগ জরিমানা হয় গম্ভীরেরও। তবে মেন্টরও হওয়ায় কোহলির চেয়ে তার জরিমানার অঙ্ক কমই ছিল। যদিও তাদের এই শাস্তি যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন সুনীল গাভাস্কার ও বীরেন্দর শেবাগ। বিবাদে জড়িতদের ম্যাচ থেকে নিষিদ্ধ কিংবা নির্বাসনের শাস্তির দাবি জানান তারা।