বাংলাদেশের ফুল ফসলের মাঠ, মৌ চাষ শিল্পের জন্য খুবই উর্ভর বলে মনে করেন, নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী খন্দকার পাড়া গ্রামের মেসার্স ফয়েজ মৌ খামারের স্বত্বাধিকারী ফয়জুর রহমান। তিনি ২০০০ সালে শেরপুর বিসিক থেকে মধু চাষের উপর ১ মাসের প্রশিক্ষণে উদ্ভুদ্ধ হয়ে এখন একজন মৌ শিল্প মালিক। প্রশিক্ষণ শেষে বিসিক থেকে মৌ চাষের ১টি নমুনা বক্স নিয়ে তিনি এ পেশায় আত্মনিয়োগ করেন।
বর্তমানে তিনি “মেসার্স ফয়েজ মৌ খামার” নামে একটি মৌচাষ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে প্রায় ২০০ মৌমাছির বক্স, মধু নিস্কাশন যন্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রীর মাধ্যমে মধু চাষ করে প্রতিবছর শতাধিক মণ মধু উৎপাদন করছেন। মধু উৎপাদনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী, লক্ষ লক্ষ মৌমাছি ও উৎপাদন কাজ দেখবাল করার জন্য নিয়োগ করেছেন ৫ জন কর্মচারী। এদের কারো বেতনই প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকার নিচে নয়। ফয়জুর রহমান জানান, মধু উৎপাদন করা যায় সরিষা, ইক্ষু, ধৈন্যা সজ, কালিজিরা সজ, লিচু ও আ¤্রমুকুল থেকে।
আমি খামারের কর্মচারী ও যন্ত্র সামগ্রী নিয়ে বছরের বিভিন্ন সময়ে গাজীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, দিনাজপুর, ইশ্বরদী, পাবনা, জামালপুর, ও শেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্পিং করে মধু আহরণ করছি। এতে প্রতি বছর শতাধিক মণ মধু উৎপাদন হচ্ছে আমার খামারে। প্রতি কেজি মধু ৪০০ টাকা দরে স্থানীয় ভাবেই বিক্রি হয়ে যায়।
ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে আমার উৎপাদিত কিছু মধু ভারতেও রপ্তানি করছি। আমার এই প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক ব্যয় নির্বাহের পরও বর্তমানে প্রতি বছর ৪/৫ লক্ষ টাকা মুনাফা হচ্ছে। আমি এখন মধু চাষ করে সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্নতা বোধ করছি।
চলতি সরিষার মৌসুমে নকলা উপজেলার উরফা ইউনিয়নের সরিষা চাষ অধ্যুষিত এলাকায় উরফা গোরস্থান মাদরাসা মাঠে তার ক্যাম্প চলছে গত ১৫ দিন ধরে। ক্যাম্পটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় খোলা মাঠে ১৬০টি বক্স বসিয়ে রেখেছেন। মৌমাছির গুণগুণানিতে শুধু মাদরাসা মাঠ নয় পার্শ্ববর্তী বিশাল সরিষার মাঠে মৌ মৌ গ্রাণ।
সপ্তাহে ১দিন মধু নিস্কাশন করা হয়, বকম গুলো থেকে প্রথম পর্বে প্রায় ৮মন মধু সংগ্রহ করেছেন। যতদিন সরিষার ফুল থাকবে ততদিনই তার এ ক্যাম্প চলবে। তিনি আশা করছেন এখান থেকে আরো ২পর্ব মধু নিস্কাশন করা যাবে।
তিনি জানান, তার খামার পরিচালনায় উল্লেখ্য যোগ্য কোন প্রকার সরকারী সহায়তা নেই। ব্যক্তিগত প্রচেষ্ঠাই তার সম্বল, তদুপরী বিভিন্ন সময়ে পুলিশি হয়ারানী ও কৃষকদের অসহযোগিতার দরুন মধু উৎপাদনে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অবশ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তা ও বুদ্ধিমান কৃষকরা আমাকে আন্তরিক সহযোগিতা করে থাকেন।
অনেক কৃষকদের ধারনা, যে ফুল থেকে মৌমাছিা মধু আহরন করে, সেখানে ফলন কম হয়। কিন্তু কৃষিবিদদের মতে মৌমাছি ছোয়া ফুলে ফসলের উৎপাদন ৩০% বৃদ্ধি পায়। এজন্যে কৃষি বিভাগের প্রচারণা বিশেষ প্রয়োজন।
১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে মৌ চাষী ফয়েজুর রহমান মনে করেন, বাংলাদেশ মৌচাষের জন্য খুবই উর্ভর। সরকারের বিনিয়োগ পৃষ্ঠপোষকতা ও কর্মপরিকল্পনা থাকলে মধুর দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বহিবিশ্বে রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। কেননা বহিবিশ্বে বাংলাদেশের উৎপাদিত সু-সাধু ও খাটি মধুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
মৌ খামারি ফয়জুর রহমান মৌচাষের উন্নতির জন্য সরকারকে ধান গবেষনা, পাঠ গবেষনা ও ইক্ষু গবেষনার ন্যায় মধু গবেষনা কেন্দ্র বা ইন্সটিটিউট স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন।