একা একা আইলেই মারবি, তাড়াতাড়ি গুলি কর, মাইরা ফালা। চুপ বেড্যা, কথা কম কো, তরড্যা তুই খেল। পেচ্যাল পারিস না তো, ওই দেখ সব প্যাকেট করছি। সোমবার (২৬ এপ্রিল) রাত দশটার দিকে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার থানারোড এলাকায় মোবাইলে গ্রæপ গেমস খেলার সময় কয়েকজন কিশোর-তরুণদের মুখে এভাবেই কথাগুলো শুনতে পান এ প্রতিবেদক।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি থামাতে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা ভিডিও গেমস খেলায় আসক্ত হয়ে পড়ার কথা জানিয়ে অনেক শিক্ষক-অভিভাবক উদ্বেগ জানিয়েছেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অলস সময় কাটাতে শিক্ষার্থীরা মোবাইলে ভিডিও গেমসের প্রতি আসক্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে অনেক শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাই অলস সময় কাটাতে ইন্টারনেটের বিভিন্ন গেমসে ঝুঁঁকছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। উঠতি বয়সী শিক্ষার্থী ও তরুণরা মোবাইল গেমসের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। যে সময় তাদের ব্যস্ত থাকার কথা পড়ালেখা ও খেলার মাঠে ক্রীড়া চর্চার মধ্যে, সেখানে তারা মোবাইলের গেমসে আসক্ত হচ্ছে। রাস্তা-ঘাট আর অলিগলিতে গেমস খেলছে আর বলছে তাড়াতাড়ি গুলি কর, মাইরা ফালা। এমন ভয়ানক কথা আর দল বেঁধে মোবাইল চালানোর দৃশ্য চোখে পড়া মত।
নিশাত নামের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, ফ্রি ফায়ার গেমস সম্পর্কে কিছু জানতাম না। বন্ধুদের দেখাদেখি খেলতে গিয়ে এখন সে আসক্ত হয়ে গেছে। ফ্রি-ফায়ার গেমস তার নেশা। মাঝেমধ্যে নেট সমস্যায় এ গেমস খেলতে না পারলে মুঠোফোন ভেঙে ফেলার ইচ্ছাও হয় তার।
মো. নজরুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক বলেন, আমার ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সে কয়েক মাস যাবত প্রতিদিন আমার কাছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা নেয়। আমি ভাবতাম পাশের দোকান থেকে খাবারপণ্য কিনে। কিন্তু আমি জানতে পারলাম, সে তার মায়ের মোবাইলে রির্চাজ করে এমবি (ডাটা) কিনে ভিডিও গেমস খেলার জন্য। এখন ছেলের এ নেশা ছাড়াতে পারছি না, খুবই মারাত্মক সমস্যায় পড়েছি।
ঝিনাইগাতী সরকারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল হামিদ বলেন, অনেক শিক্ষার্থীই পড়ার টেবিল ছেড়ে খেলছে মোবাইল গেমস। মোবাইলে গেমস খেলার প্রবণতা মহামারি আকার ধারণ করেছে। এতে তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। এতে অপরাধ প্রবণতা বাড়তে পারে। শিক্ষার্থীদের মা-বাবাসহ সমাজের সবারই খেয়াল রাখতে হবে, যেন তারা মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার না করতে পারে।
মানবাধিকারকর্মী আক্তারুজ্জামান বলেন, ফ্রি ফায়ার গেমস যেকোনো নেশার চেয়ে ভয়ঙ্কও হয়ে উঠছে। এই সমস্যা থেকে আমাদের সন্তান, ভাই-বোনদের বাঁচাতে হলে অভিভাবকদের পাশাপাশি সমাজের সচেতন মহল, শিক্ষকসহ, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি আর প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে এসব গেমস খেলা হয়। যারা এ গেমস খেলে তাদের চোখের ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন না দিলে তারা চোখসহ নানা রোগ থেকে অনেকটাই রেহাই পাবেন।