চোট কাটিয়ে ফিরলেন করিম বেনজেমা, তবে রইলেন নিজের ছায়া হয়ে। রিয়াল মাদ্রিদের পুরো আক্রমণভাগের চিত্রই তাই। প্রতিপক্ষের দুর্বলতায় আধিপত্য করল তারকাসমৃদ্ধ পিএসজি। তবে মিলছিল না গোল। পেনাল্টি পেয়েও কাজে লাগাতে পারলেন না লিওনেল মেসি। অবশেষে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গিয়ে ব্যবধান গড়ে দিলেন কিলিয়ান এমবাপে।
ঘরের মাঠে মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ১-০ গোলে জিতেছে পিএসজি।
চোট কাটিয়ে আড়াই মাস পর মাঠে নেমে দলকে জেতাতে ভূমিকা রাখলেন নেইমারও। এমবাপের দারুণ গোলটিতে দুর্দান্ত ব্যকহিলে পার্শ্বনায়ক তো তিনিই।
এমন হাইভোল্টেজ ম্যাচের শুরুতেই সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান আনহেল দি মারিয়া। বাঁ দিক থেকে এমবাপের বাড়ানো বল ফাঁকায় পেয়ে আট গজ দূর থেকে যেভাবে উড়িয়ে মারেন আর্জেন্টাইন তারকা, তা খুবই দৃষ্টিকটু।
নিজেদের সীমানা থেকে বের হতেই পারছিল না রিয়াল। তাদের বক্সের আশেপাশে পিএসজি পজেশন ধরে রাখলেও পারছিল না সুযোগ তৈরি করতে। অষ্টাদশ মিনিটে ডিফেন্ডার এদের মিলিতাওয়ের চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন এমবাপে। তবে তার দুর্বল শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন থিবো কোর্তোয়া।
প্রথমার্ধের বাকি সময়েও খেলা চলেছে একইভাবে। মাঝেমধ্যে রিয়াল সামনে এগোনোর চেষ্টা করেছে বটে, তবে সত্যিকার অর্থে এই অর্ধে দলটির আক্রমণভাগ বলতে যেন ছিল না কিছুই। বিরতির আগে গোলের উদ্দেশ্যে কোনো শটই নিতে পারেনি তারা, একবারের জন্যও ভীতি ছড়াতে পারেনি প্রতিপক্ষের বক্সে। অবশ্য পিএসজির এই সময়ের পারফরম্যান্সও খুব একটা প্রশংসনীয় নয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও চাপ ধরে রাখা পিএসজি ৫০তম মিনিটে লক্ষ্যে দ্বিতীয় শট নিতে পারে। তবে কোর্তোয়ার বাধা এড়াতে পারেনি তারা; এমবাপের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান গোলরক্ষক। চার মিনিট পর গোলের উদ্দেশ্যে প্রথম শট নেয় রিয়াল। টনি ক্রসের দূরপাল্লার ওই প্রচেষ্টা ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
৬১তম মিনিটে আসে মেসির ওই পেনাল্টি মিসের হতাশা। এমবাপেকে ডি-বক্সে দানি কারভাহাল ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। বার্সেলোনার জার্সিতে রিয়ালের বিপক্ষে ২৬ গোল করা আর্জেন্টাইন তারকা এবার পারেননি; তার দুর্বল শট আয়ত্ত্বে পেয়ে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন কোর্তোয়া।
বেলজিয়ান গোলরক্ষকের এমন নৈপুণ্যও তার সতীর্থদের উজ্জীবিত করতে পারল না। যেন খোলস থেকে বের হওয়ার পথই পাচ্ছিলেন না বেনজেমা-ভিনিসিউসরা।
আক্রমণের ধার বাড়াতে ৭৩তম মিনিটে দি মারিয়াকে তুলে নেইমারকে নামান কোচ। মাঠে নামার কয়েক সেকেন্ড পরই মাঝ বরাবর বল নিয়ে দারুণ কারিকুরিতে আক্রমণে ওঠেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। বাধ্য হয়ে তাকে ফাউল করেন দাভিদ আলাবা। কিন্তু ২০ গজ দূর থেকে ফ্রি কিক লক্ষ্যে রাখতে পারেননি মেসি।
তিন মিনিট পর মেসির পাস ডি-বক্সে বাঁ দিকে পেয়ে কোনাকুনি শট নেন এমবাপে। বল কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে দূরের পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়।
৮০ মিনিটের পর ম্যাচের গতিপথ কিছুটা পাল্টায়। যেন পথ খুঁজে পায় রিয়াল। যদিও নিশ্চিত কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি ম্যাচ জুড়ে হতশ্রী ফুটবল খেলা দলটি। পুরো ম্যাচে গোলের উদ্দেশ্যে তিনটি শট নিয়ে একটিও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি তারা!
চার মিনিট যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে অবশেষে জয়সূচক গোল। নেইমারের ব্যাকহিলে বল ধরে বাঁ দিক দিয়ে প্রতিপক্ষের দুজনের মধ্যে দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে আরেকজনের বাধা এড়িয়ে দুরূহ কোণ থেকে শট নেন এমবাপে। কোর্তোয়ার প্রসারিত পায়ের নিচ দিয়ে বল খুঁজে নেয় ঠিকানা। উল্লাসে ভাসে পিএসজি। পাক দি ফ্রাঁসের গ্যালারি হয়ে ওঠে উত্তাল।
পুরো ম্যাচেই বল দখলে আধিপত্য করে পিএসজি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে তাদের পারফরম্যান্স ছিল বেশি উজ্জ্বল। প্রথমার্ধে গোলের উদ্দেশ্যে পাঁচ শট নিয়ে কেবল একটি লক্ষ্যে রাখতে পারে তারা। সেখানে বিরতির পর আরও ১৬টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখে সাতটি।
অন্যভাবে দেখলে এত এত সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পারাটা মোটেও সন্তোষজনক নয়। তবে ইউরোপ সেরার মঞ্চে রেকর্ড চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে দারুণ এই জয়ের পর মেসি-এমবাপেদের এখন উদযাপনের সময়।
রিয়ালের বিপক্ষে এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচ অপরাজিত রইল পিএসজি। ২০১৯-২০ আসরে গ্রুপ পর্বে প্রথম দেখায় ৩-০ গোলে জয়ের পর ফিরতি লেগে সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে ২-২ ড্র করেছিল প্যারিসের দলটি।
রিয়ালের জন্য ম্যাচটিকে বলা যায় বড় সতর্কবার্তা। গত মাসে স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ের পর থেকে দলটি যেন নিজেদের খুঁজে ফিরছে। এই সময়ে তারা ছিটকে পড়েছে কোপা দেল রে থেকে। লা লিগায় তিন রাউন্ডে জিতেছে মাত্র একটিতে।
সঙ্গে এবার বাজে পারফরম্যান্সে এই পরাজয়। সামনের ব্যস্ত সময়ে কক্ষপথে ফিরতে খুব বেশি সময় হাতে নেই। আগামী ৯ মার্চ তাদের মাঠেই হবে শেষ ষোলোর ফিরতি লেগ।