মহান আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ, অফুরান করুণা আর তাকওয়া অর্জনের শাশ্বত পয়গাম নিয়ে আমাদের দোরগোড়ায় বছর ঘুরে আবারও হাজির মহিমান্বিত মাস রমজানুল মোবারক।
অপার বরকতের এ মাসে মোমিন বান্দাগণ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় ও তাকওয়ার সোপান সিয়াম সাধনার পাশাপাশি সালাতুত তারাবিহ, তাহাজ্জুদ, কুরআন কারিম তিলাওয়াত, দান-সদকাহ ইত্যাদি ইবাদতে অধিক মনযোগী হয়ে নিজেদেরকে মহান প্রভুর কাছে সপে দেবেন, তার প্রিয় হতে আত্মনিয়োগ করবেন।
২৯ বা ৩০ শাবান সন্ধ্যার আকাশে রমজানের নতুন চাঁদ উদিত হলে রাসুল (সা.) নির্দিষ্ট দোয়া পড়ে এ মাসকে বরণ করতেন। এটি এখন একটি বিলুপ্তপ্রায় সুন্নাহ। আমাদের সকলকে আগ্রহ নিয়ে চাঁদ দেখতে সচেষ্ট হবে।
মৃতপ্রায় এ সুন্নাহকে জীবিত এবং সার্বজনীন করে তুলতে একে অপরকে উৎসাহিত করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখো এবং চাঁদ দেখে ভঙ্গ করো (ঈদ করো)।’ (মুসলিম)
রাসুল (সা.) রমজান ও অন্যান্য মাসে নতুন চাঁদ দেখে এ দোয়া পড়তেন- ‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল-য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলাম, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।’
অর্থাৎ: ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাদের জন্য এ চাঁদকে সৌভাগ্য ও ঈমান এবং শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। আল্লাহই আমার ও তোমার রব।’ (জামে’ তিরমিজি)
ইবাদতের বসন্তকাল অবারিত পুণ্যের এ মাসে, একটি নফল ইবাদত অন্য মাসের ফরজ এবং একটি ফরজ ইবাদত অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ ইবাদত এর পুণ্য সমতুল্য বলে প্রিয় নবীজি সা. ঘোষণা করেছেন।
এ মাস মুমিনদের জন্য মহান রবের পক্ষ থেকে মহা অনুগ্রহ। এ মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের, অবারিত পুণ্য চাষের।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে রোজা, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পারো।’ (সুরা বাকারাহ : ১৮৩)
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, মুসলিম)
অপর হাদিসে রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে, এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারী, মুসলিম)
অপার বরকতময় এ মাসে আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘রমজান মাস, এতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়াতের জন্য এবং হেদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে…।’ (সুরা বাকারাহ : ১৮৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবদ্দশায় প্রতি রমজান মাসে জিবরাঈল (আ.) নবীজি (সা.) এর কাছে আসতেন, কুরআন তেলাওয়াত করতেন, রাসুল (সা.) শুনতেন। আবার নবীজি (সা.) তেলাওয়াত করতেন, জিবরাঈল (আ.) শুনতেন।
কুরআন নাজিলের এ মাসে ধরণীর পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্র সর্বস্তরের মোমিনরা কুরআন তেলাওয়াত শিখা-শিখানো, বুঝা-বুঝানো এবং কুরআনের আলোকে জীবন ও সমাজ সাজানোর কাজে অপরাপর মাসের তুলনায় অধিক মনযোগী হন।
পুণ্যময় এ কাজে আমাদের সকলকে অংশগ্রহণ করতে হবে। নিজেকে, পরিবারের সকল সদস্যকে, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিটি মুমিন ভাই-বোনকে শুদ্ধভাবে কুরআন কারিম তিলাওয়াতে সক্ষম করতে সচেষ্ট হতে হবে৷ বিশেষত, রমজান মাসে এটিকে আমাদের মিশন হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশীগ্রন্থ আল কুরআন এবং মহিমান্বিত রমজানুল মোবারক এর অন্যতম দাবিও এটি আমাদের প্রতি।
স্মর্তব্য যে, আল্লাহর দরবারে সালাত কবুল হওয়ার জন্য সালাতে বিশুদ্ধ তেলাওয়াত অপরিহার্য। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘তোমরা ধীরে ধীরে বিশুদ্ধভাবে কুরআন আবৃত্তি করো।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল : ৪)
অপরদিকে মহৎ এ কাজে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা হয়ে যাবো উম্মতের শ্রেষ্ঠ মানুষ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সেই, যে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।’ (বোখারি)
আসুন, আমরা আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ হই। কুরআনের আলোয় আলোকিত হোক আমাদের রমজান, আমাদের জীবন, উদ্ভাসিত হোক পুরো বসুন্ধরা।
লেখক: মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী
শিক্ষক ও সাংবাদিক