দুর্নীতি করে গা ঢাকা দেওয়া ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা খাদ্য গুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত ২১ নভেম্বর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেবেকা সুলতানা রুবী বাদী হয়ে মুক্তাগাছা থানায় মামলা করেন। মুক্তাগাছা উপজেলা খাদ্য গুদামের ৩২৯ টন চাল ঘাটতির ঘটনায় বরখাস্ত করা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
গত ১০ অক্টোবর মুক্তাগাছা উপজেলা খাদ্য গুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদের বদলির আদেশ হয়। ১২ অক্টোবর তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সাইফুল ইসলামকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা না করে ১৭ অক্টোবর গুদামের চাবি নিয়ে গা ঢাকা দেন। এ ঘটনায় গুদামে চাল ঘাটতি রয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এমন সন্দেহে ২২ অক্টোবর গঠন করা হয় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে গুদামের তালা ভেঙে মজুত যাচাই করা হয়। দীর্ঘ প্রায় একমাস পর তদন্ত কমিটি ৯ হাজার ৯৭১টি বস্তায় ৩২৮ মেট্রিক টন ৯৮০ কেজি চাল ঘাটতি পান। যার বাজারমূল্য ১ কোটি ৭০ লাখ ৭ হাজার ২২৮ টাকা। ৩০ কেজি চালের খালি বস্তার ঘাটতি ১১ হাজার ৪৬৬টি এবং ৫০ কেজি চালের খালি বস্তার ঘাটতি ৩৮০টি। যার বাজারমূল্য ৭ লাখ ২৫ হাজার ৯৬০ টাকা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের বলেন, যোগদান করেই এ ঘটনার সম্মুখীন হই। মুক্তাগাছা উপজেলা খাদ্য গুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ তার দায়িত্ব হস্তান্তর না করে গা ঢাকা দেওয়ায় সন্দেহের ঘাটতি হলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি গুদামটিতে ৩ হাজার ৩৭৯ মেট্রিক টন চাল মজুতের মধ্যে ৩২৮ মেট্রিক টন ৯৮০ কেজি চাল ঘাটতি পায়। এছাড়াও ৩০ কেজি এবং ৫০ কেজি চালের খালি বস্তা ১১ হাজার ৮৪৬টি ঘাটতি পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে গুদাম কর্মকর্তা ১ কোটি ৭৭ লাখ ৯৮ হাজার ২৪১ টাকার দুর্নীতি করেছে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেবেকা সুলতানা রুবী বাদী হয়ে ফৌজদারী আইনে শাকিলের নামে একটি মামলা করেন। শাকিলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি দুদকও তদন্ত করছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে। অনিয়ম করে কেউ আইনের ফাঁকফোকরে বেরিয়ে যাবে সেই সুযোগ নেই।
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামে মজুত চালের ঘাটতি পাওয়ায় একটি ফৌজদারী মামলা হয়েছে সাবেক গুদাম কর্মকর্তা শাকিলের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে নতুন ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা হিসেবে সাইফুল ইসলামকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শাকিলের বিরুদ্ধে অচিরেই বিভাগীয় মামলা হবে। পরে সেই মামলার তদন্তে অন্য কারও দায় আছে কি না, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাকরি অনুযায়ী সরকার প্রত্যেককে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে। তারপরও যারা অনিয়ম দুর্নীতি করছে বা করবে তাদের কোনভাবেই ছাড় নয়। মুক্তাগাছার বিষয়টির পরপরেই প্রত্যেক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে সতর্ক করা হয়েছে এসব বিষয়ে তৎপর থাকার জন্য।
মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ বলেন, চাল আত্মসাতের অভিযোগ গত ২১ নভেম্বর সাবেক গুদাম কর্মকর্তা শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে ৪০৯ ধারায় একটি মামলা করা হয়েছে। মামলাটি দুদক তদন্ত করছে। আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।