প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত নেতার ভিড় কেবলই বাড়ছে। তারা প্রতিদিনই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করছেন। এর মধ্যে খুবই আবেগমথিত হয়ে উঠেছিল গত বুধবারের দৃশ্যপট। মনোনয়নবঞ্চিতরা ওই দিন তাদের ভরসাস্থল প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে নিজেরা কেঁদেছেন, অন্যদের কাঁদিয়েছেন।
এদিন মনোনয়নবঞ্চিত অনেকের চোখের পানিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও কিছু সময়ের জন্য আবেগাপ্লুত হয়েছেন। তিনি তাদের সান্ত্বনা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট আবার ক্ষমতায় গেলে সবাইকে মূল্যায়ন করার আশ্বাসও দিয়েছেন। বলেছেন, যোগ্যতা থাকার পরও সবাইকে মনোনয়ন দেওয়া অসম্ভব। মনোনয়ন পাবেন একজন। তাই কষ্ট ভুলে নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। মহাজোটের প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে হবে।
গণভবনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা সমকালকে এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা অন্য সব দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাদের প্রত্যাশার কথা জানালেও বুধবারের অনুষ্ঠানটি ছিল একেবারেই ব্যতিক্রম। এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়নবঞ্চিত কয়েকজন নেতার কথা শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় অনুষ্ঠানমঞ্চে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক উপসাহিত্য সম্পাদক সরকার ফারহানা আক্তার সুমি নীলফামারী-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন সরকার ফারহানা আক্তার সুমি। তিনি বলেন, আবেগময় ও হৃদয়কাড়া বক্তব্যের একপর্যায়ে তার দুই চোখের কোণে পানি জমে। আবেগাপ্লুত হন প্রধানমন্ত্রী নিজেও।
ঢাকা-৪ আসনে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। এ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তিনি মহাজোটের মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ তার মনোনয়নের বিরোধিতা করে আসছে। বুধবার গণভবনে এর বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে। সেখানে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কোহিনুর বেগম বলেছেন, আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। সেই নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কীভাবে নির্বাচনে কাজ করবেন?
বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বি. চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পাচ্ছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী ঢাকা দক্ষিণ মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘আপনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। তাই মহাজোটের প্রয়োজনে ছাড় দিতে আপত্তি নেই।’ পাবনা-২ আসনের বর্তমান এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু তাকে দলের মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ করেছেন।
কুমিল্লা-৩ আসনের বর্তমান স্বতন্ত্র এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনকে দলের মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার। বরগুনা-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী মশিউর রহমান শিহাব বর্তমান এমপি দলের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর পরিবর্তে যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। একই কথা বলেছেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহে আলম বরিশাল-২ আসনে তাকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। এ আসনের বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। এ আসনটি জাতীয় পার্টির সোহেল রানাকে ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নরসিংদী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন বর্তমান এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তার মনোনয়নের বিরোধিতা করেছেন এ আসনের সাবেক এমপি জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন।
ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মোর্শেদ কামালের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তিনি সেখানে দলের মনোনয়ন চাইছেন। তিনি তার প্রত্যাশার কথা জানালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঢাকায় বসে এলাকার নির্বাচন হবে না। নাটোর-২ আসনে দলের মনোনয়ন চেয়েছেন এ আসনের সাবেক এমপি আহাদ আলী সরকার। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার ও তার পুত্রের প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডের কারণেই আহাদ আলী সরকার দলের মনোনয়ন পাননি।