বিদায় নিলেন শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এবিএম এহছানুল মামুন। তিনি ২০১৭ সালের ৭আগষ্ট শেরপুরে অন্তিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পান। সবশেষ তিনি শেরপুর জেলা প্রশাসনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
বৃহস্পতিবার বিদায়ী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এবিএম এহছানুল মামুনকে আনুষ্ঠানিক বিদায় সংবর্ধনা প্রদান করে শেরপুর জেলা প্রশাসন। এসময় দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক, ডিজিটাল ও জনমুখী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্ণিল কর্মযজ্ঞের স্বীকৃতিস্বরূপ শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০১৯ প্রদান করেন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব। তার বিদায়ের পর শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ওয়ালীউল হাসান।
বিদায়ের পর বৃহস্পতিবার রাতে নিজ ফেসবুক প্রোফাইলে শেরপুর জেলাকে নিয়ে একটি আবেগঘন ষ্ট্যাটাস লিখেন এবিএম এহছানুল মামুন। তার লিখা পুরো স্ট্যাটাসটি শেরপুর টাইমসের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
“যাব যাব করে চরণ না সরে
ফিরে ফিরে চাই পিছে
পড় পড় জলে ভর ভর চোখ
শুধু চেয়ে থাকে নিচে।”সরকারী চাকুরী জীবনের অনিবার্য বাস্তবতা বদলি। চেনা কর্মস্থল, সহকর্মী পেছনে রেখে বিদায় নিয়ে হাঁটতে হয় নতুন পথে। এক কর্মজীবনে সম্মুখীন হতে হয় একাধিক বিদায়ের। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ০৯.০৭.২০২০ তারিখে শেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় কে পিছনে রেখে চলে যাচ্ছি।
০৭/০৮/২০১৭ সালে শেরপুর জেলা প্রশাসন পরিবারের সদস্য হিসাবে যোগ দিয়েছিলাম। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ডক্টর মল্লিক আনোয়ার স্যারের নেতৃত্বে একটি টিম হিসেবে কাজ করেছি অনন্য শেরপুর গড়ার লক্ষ্যে। অন্তিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে শুরু করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজ করার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি।
শেরপুর জেলার মান্যবর জেলা প্রশাসক জনাব আনার কলি মাহবুব স্যারের উষ্ণ বিদায় সংবর্ধনায় আজ সম্মানিত হলাম, আন্তরিক শুভেচ্ছায় আপ্লুত হলাম।
শেরপুর ছেড়ে চলে যাচ্ছি ভেবে খুব খারাপ লাগছে এই জন্য যে, এখানে প্রায় তিন বছরের কর্মকালে আমি সিনিয়র স্যারদের কাছ থেকে পেয়েছি অনেক, আন্তরিক চেষ্টা সত্বেও কতটুকু দিতে পেরেছি সেটা তাঁরাই মূল্যায়ন করবেন। এ কাজ করার সময়কালকে ‘অনন্য অভিজ্ঞতা’ বলে অভিহিত করতে চাই। মান্যবর ডিসি জনাব আনার কলি মাহবুব স্যার আমাকে দিয়েছেন অসামান্য স্নেহ, কাজের সুবিবেচিত স্বাধীনতা আর অপার অনুপ্রেরণা। স্যার সব সময় কাজ শিখিয়েছেন হাতে কলমে, নির্দেশনা দিয়েছেন টু দ্যা পয়েন্ট এ। আমার উপর কোন আঁচড় পড়তে দেননি, নিজের ছোট ভাইয়ের মত আগলে রেখেছেন।
ডিডিএলজি এটিএম জিয়াউল ইসলাম স্যার দিয়েছেন ভাতৃতূল্য দিকনির্দেশনা আর প্রতিটি সমস্যায় জুগিয়েছেন সমাধান করার সমূহ সাহস। জন কেনেডি জাম্বিল স্যার [সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক( সার্বিক), শেরপুর এবং বর্তমানে উপ-পরিচালক, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, ময়মনসিংহ] আমার জন্য ওকালতি করতে যেয়ে কত যে বকা খেয়েছেন তা কখনোই ভুলবার নয় – সদা হাস্যজ্জল অকৃত্রিম হাসিমাখা মুখ আর পরম স্নেহ দিয়ে সর্বদা কাজ করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। বন্ধুবর সৈয়দ এ জেড মোরশেদ আলী তার অকৃত্রিম বন্ধুত্ব এবং পান্ডিত্যপূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে কঠিন কাজ কে সহজে পরিণত করেছে – দুঃসময়ের নিঃস্বার্থ ভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে সহযোগিতার হাত। সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) বৃন্দ যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে জনসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করেছেন তার তুলনা হয় না। কালেক্টরেটের স্নেহের জুনিয়র সহকর্মীগণ তাদের সামর্থ্য এর অধিক সহায়তা দিয়ে প্রতিটি কাজে সফলতা আনতে রেখেছেন অসামান্য অবদান। সকল শাখার প্রিয় সহকর্মীগণ তাদের নিষ্ঠা, প্রচেষ্টা,আন্তরিকতা, অধ্যবসায় আর পরিশ্রম দিয়ে আমাদের টিম স্পিরিটকে করেছেন সমৃদ্ধ।
এই কর্মকালীন সময়ে বিশেষ করে শেরপুর জেলার সম্মানিত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিবৃন্দ , বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রধানগণ, সুশীল সমাজ, শিক্ষকবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, জেলা প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবক বৃন্দ এবং সর্বোপরি জনগণের অশেষ সহযোগিতা এবং আমার শুভাকাঙ্খীদের প্রেরণা আমার দায়িত্ব পালনে সহায়ক হয়েছে।
করোনা মহামারীর এই সংকটময় সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় বলতে না পারায় আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এই দুর্যোগের সময়ে আপনারা সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এই দোয়া রইল।
আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য আপনাদের সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী।
আজ এখানে রেখে যাচ্ছি আমার ভালোবাসার বীজ, প্রাণের খনিজ। চিরজীবন সে ভালোবাসা অটুট থাকুক এমনি করে অমরত্বের ফসিল হয়ে।
“ভালো থেকো শেরপুর
প্রণের শেরপুর
অনন্য শেরপুর
বিদায় শেরপুর।”