অনেকটা নিরবেই চলে গেলেন ভাষা সংগ্রামী অসিত কুমার দেব (৯৫)। শেরপুরে নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বন্দটেকি গ্রামের নিজবাড়ীতে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ৯ জুন মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় তিঁনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তিঁনি স্ত্রী, ২ ছেলে রেখে গেছেন। সন্ধ্যা ৭টায় চন্দ্রকোনা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্যের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে প্রভাষক জয়ন্ত কুমার দেব ।
নির্জন পল্লীতে নির্ভতে থাকা অসিম কুমার দেব ময়মনসিংহের মৃত্যুঞ্জয়ী স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। সেসময় ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ভাষার দাবীতে আন্দোলনতরত ছাত্রদের মিছিলে সরকারি বাহিনী গুলি করে ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে দাবানলের মতো প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। তার ঢেউ এসে লাগে ময়মনসিংহেও। ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ ডিসি অফিস ঘেরাও করে ছাত্র-জনতা।
সেই মিছিল থেকে যে ১৭ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিলো অসিম কুমার দেব ছিলেন তাদেরই একজন। ৪ দিন জেলহাজতে থাকার পর মুক্তি মিলেছিলো। পরবর্তীতে তিঁনি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়লেও শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। দীর্ঘদিন নকলার গণপদ্দি উচ্চ বিদ্যালয় ও চন্দ্রকোণা রাজলক্ষ্মী উচ্চ বিদ্যালয়ে তিঁনি নিষ্ঠার সাথে শিক্ষকতা করে নিজবাড়ীতে অবসরযাপন করছিলেন। ইংরেজীর শিক্ষক হিসেবে এলাকায় তাঁর ব্যাপক সুনাম ছিলো।
‘অসিত স্যার’ নামেই তিঁনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। নির্ভতে থাকা এ ভাষা সংগ্রামীকে নিয়ে ২০১৭ সালের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে চন্দ্রকোনা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাঁকে সম্মাণনা দেওয়া হয়। কিন্তুএকুশে ফেব্রুয়ারি ভাষাদিবস কিংবা সরকারীভাবে তাঁকে ভাষাসংগ্রামী হিসেবে কোন ধরনের স্বীকৃতি কিংবা সম্মাণনা জানানো হয়নি বলে জানিয়েছে তার স্বজনরা। অবশ্য সরকারি কোন স্বীকৃতির জন্য কখনো তিনি কোন ধরনের আফসোসও করেননি। এ দায় তার নয়, আমাদের। তাঁর মৃত্যুতে নকলা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মো. বুরহান উদ্দিন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।