ভাষাসংগ্রামী ও প্রথিতযশা চিকিৎসক হিসেবে ডা. আনোয়ারুল ইসলাম ছিলেন শেরপুরের একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় তিনি একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ভাষাসংগ্রামী হিসেবে ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তার ছিল সক্রিয় অংশ গ্রহণ। সেসময় তিনি শেরপুরের আন্দোলনে সকল কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
ডা. আনোয়ারুল ইসলাম ১৯৩৪ সালে শেরপুরে জন্ম গ্রহন করেন। তার বাবা মরহুম আফতাবউদ্দিন আহমদ ছিলেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের জামালপুর মহকুমার প্রথম বিএল ডিগ্রী অর্জনকারী অ্যাডভোকেট ও শেরপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান, মা আমেনা ইসলাম। স্ত্রী ডা. আবেদা ইসলাম দেশের খ্যাতনামা গাইনী বিশেষজ্ঞ । বড় ভাই মরহুম অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম ছিলেন দেশের প্রথিতযশা আইনজীবী ও পূর্ব পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের বিচার বিভাগের প্রাক্তন সদস্য। মেঝ ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী চিকিৎসক ডা. আশরাফুল ইসলাম একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ। একমাত্র বোন রওশন আরা বেগম দেশের খ্যাতনামা শৈল্য বিশেষজ্ঞ মরহুম ডা. নওয়াব আলী আহমদের স্ত্রী।
ডা. আনোয়ারুল ইসলাম শেরপুর ভিক্টোরিয়া একাডেমী থেকে মেট্টিক্যুলেশন, ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক ভিপি।
ডা. আনোয়ারুল ইসলাম ছিলেন দেশের প্রথম এফসিপিএস ডিগ্রী অর্জনকারী চিকিৎসক। তিনি লিবিয়ার ত্রিপলির আবুসেত্বা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘ ৫০ বছর সুনামের সঙ্গে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায় ব্রিটিশ আমল থেকে এগিয়ে ছিল শেরপুর। ডা. আনোয়ারুল ইসলাম মধ্য চল্লিশ দশকে তার তিন সহোদর ও সহপাঠীদের নিয়ে শেরপুরে গড়ে তোলেন সাংস্কৃতিক পরিম-ল, তাদের প্রচেষ্টায় সেসময় আবৃত্তি, গান আর নাটক ফিরে পায় নতুন প্রাণের জোয়ার। তার প্রচেষ্টায় সেসময় শিশু-কিশোরদের জন্য গড়ে ওঠে মুকুল ফৌজ শেরপুর শাখা। তিনি চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি ২০১৬ সালের ৫ আগস্ট ইন্তেকাল করেন।