শেরপুর শহরের সজবরখিলা এলাকার হরিজনপল্লীর অদিবাসীরা ভাঙাচোড়া ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অবহেলিত এ জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করলেও এখানে বসবাসকারি প্রায় তিন শতাধিক পরিবারে আধুনিকতার ছোঁয়া তেমন একটা লাগেনি। সম্প্রতি মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে হরিজনপল্লীর বাসিন্দাদের আবাসন সংকট দূর করতে সরকারিভাবে সাততলা বিশিষ্ট পাকাভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে শেরপুরসহ কয়েকটি জেলার হরিজনপল্লীতে এসব বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ এলজিইডি’র পক্ষ থেকে জায়গাও পরিমাপ করা হয়েছে।
জানা যায়, শেরপুর শহরের সজবরখিলা এলাকায় অবস্থিত হরিজনপল্লীর বাসিন্দা ৩৬টি পরিবারকে পূণর্বাসনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আবাসনের বহুতল ভবন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ সম্পন্ন করে নকশা অনুমোদন করা হয়েছে। কিন্তু ভূমি জটিলতার কারণে শেরপুরের হরিজনপল্লীর সরকারি বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ থমকে আছে। শেরপুর শহরের সজবরখিলা এলাকার ভুমি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত। যে কারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাসখতিয়ানের ওই ভুমি আবাসনের জন্য ব্যবহারের উদ্যোগ না নেওয়া পর্যন্ত বহুতল ভবন নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শেরপুর হরিজনপল্লীর ভুমি জটিলতা নিরসন করে অবিলম্বে সরকারী বহুতল ববন নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন হরিজন পল্লীর বাসিন্দা সহ নাগরিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
৬ জুলাই বুধবার দুপুরে শেরপুর শহরের সজবরকিলা এলাকার হরিজনপল্লী পরিদর্শন করে তাদের বিভিন্ন সমস্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির সদস্যরা। এসময় স্থানীয় মিডিয়াকর্মীরাও তাদের সাথে ছিলেন। পরে হরিজনপল্লীর ভুমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করে সরকারী বহুতল ববন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবীতে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এসময় জনউদ্যোগ কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, সদস্য সচিব হাকিম বাবুল, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শিব শংকর কারুয়া, প্রেসক্লাব সভাপতি শরিফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন, শিক্ষক আবু হান্নান, নারী উদ্যোক্তা আইরীন পারভীন, বিতার্কিক এসএম ইমতিয়াজ চৌধুরী, শুভংকার সাহা, হরিজন নেতা নন্দ কিশোর হরিজন, বিমল বাসফোর, শাামল বাসফোর, মুক্তা হরিজন, মিলন হরিজন, রাজু হরিজন সহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার কার্যালয়ের বাইরে থাকায় নেতবৃন্দ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোক্তাদিরুল আহমেদের সাথে কথা বলেন এবং এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করেন।
হরিজনপল্লীর বাসিন্দা সমাজনেতা নন্দ কিশোর হরিজন বলেন, আমরা এখানে প্রায় ৩০০ বছর ধরে বংশানুক্রমে বসবাস করে আসছি। জায়গাটি জেলা প্রশাসনের খাস খতিয়ানের। দিন দিন এখানকার লোকসংখা বেড়েছে, কিন্তু তেমন কোন উন্নয়ন ঘটেনি। প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে আমাদের এখানে ৭ তলা ভবন হওয়ার কথা শুনে আমরা খুব আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু এখন শুনছি, জমির জটিলতার কারণে নাকি ভবন নির্মাণ আটকে যাচ্ছে। আমরা চাই, সরকারের জমি, সরকার সব জটিলতা নিরসন করে আমাদের এখানে ৭ তলা ভবনটি বাস্তবায়ন করা হোক।
বিমল বাসফোর বলেন, আমাদের এখানে হেলা ও বাসফোর সম্প্রদায় মিলে প্রায় তিন শতাধিক হরিজন পরিবার রয়েছে। আমাদের নিজস্ব কোন জমি নেই। সরকারি জমিতে থাকি। ভাঙ্গাচোড়া, ঘিঞ্জি পরিবেশে আমরা বউ-বাচ্চা নিয়ে অত্যন্ত অমানবিক পরিবেশে বসবাস করে আসছি। দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর ৭ তলা পাকা ববন নির্মাণের কথা শুনে আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম। নিজেরা ভালো, উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু এখন নাকি জমির জটিলতার কারণে ভবনটি নির্মাণে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাই, সকল জটিলতা নিরসন করে অবিলম্বে ববনটি নির্মাণ করা হোক।
নাগরিক প্ল্যাফরম জনউদ্যোগ আহ্বায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠি হরিজন সম্প্রদায় চরম অবহেলিত, বিছিন্ন, উপেক্ষিত জনগোষ্ঠি। ভূমিহীন ও নিজস্ব বসতভিটাহীন হরিজন সম্প্রদায়। জটিলতা কী আছে, না আছে, সেটা আমরা দেখতে চাই না। আমরা চাই, সকল ধরনের জটিলতা নিরসন করে প্রধানমন্ত্রীর মুজিববর্ষের উপহারের ৭ তলা আবাসিক ভবন শেরপুর হরিজনপল্লীতে নির্মিত হোক। বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের জন্য আমরা জেলা প্রশাসন, পৌরসভা সহ সংশ্লিষ্ট কতর্ৃপক্ষের সদয় পদক্ষেপ কামনা করছি।
শেরপুর এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসন ও শেরপুর পৌরসভা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ভুমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হলেই ৭ তলা আবাসন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে।
শেরপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন বলেন, শেরপুর হরিজনপল্লীর জমি সরকারের খাস খতিয়ানের। ওই জমি পৌরসভাকে বরাদ্দ না দেওয়া পর্যন্ত ৭ তলা ভবনটি নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। ওই জমি জেলা প্রশাসরে নিকট থেকে কিনে নেওয়ার মতো আর্থিক সংগতি শেরপুর পৌরসভার নেই। যে কারণে নামমাত্র মূল্যে কিংবা সালামীর বিনিময়ে পৌরসভার নিকট ওই জমি হস্তান্তর করলে কাজটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলবো।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোক্তাদিরুল আহমেদ বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কনসার্নে আছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হরিজনপল্লীর বাসিন্দাদের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।