আজ বড্ড জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ফিডব্যাকের সেইগানটির কথা মনে পড়ছে, সে যেন গান নয়,ভালবাসার তাড়নায় উম্মুখ হয়ে থাকা প্রেমিক মনের অসহায় আকুতি। প্রিয় পাঠক মনে আছে সেই গানের কথাগুলো ?
যদি মনে থাকে তো ভাল না থাকলে মনে করিয়ে দেয় সেই বিখ্যাত হৃদয়ছোঁয়া গান ‘আজ তোমার চিঠি যদি না পেলাম হায়, নাকি ভেবে নেব ডাকপিয়নের অসুখ হয়েছে’—জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ফিডব্যাকের বিখ্যাত এই গানের কথার মতো এখন আর কেউ হয়তো প্রিয়মানুষের চিঠির অপেক্ষায় থাকে না।
চিঠি পাঠিয়ে উত্তরের আশায় ডাকপিয়নের পথ চেয়ে বসে থাকার দিনও বুঝি অনেক আগেই ফুরিয়েছে। শেরপুরের ডাকবাক্সগুলোর (লেটারবক্স) দিকে তাকালে এ ‘সত্য’ আরও বেশি বোঝা যাবে। এখন আর শিল্পি মনির খানদের গান ‘ বউ আমার চিঠি লেখেছে ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে’ আগের মত আবেগ ছড়ায়না ।
ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শেরপুরে ডাকবাক্সে প্রতিদিন গড়ে ৫০টি চিঠি জমা পড়ে। ডাক বিভাগের পিয়নরা প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪৫০ সাধারণ ও রেজিস্ট্রি চিঠি (দ্রুত বিলি করা হয় ও নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে) বিলি করে থাকেন বলে জানিয়েছেন।
একাধিক ডাকপিয়ন জানান, কয়েক বছর ধরেই আগের মতো আর চিঠি আসে না। এ কারণে তাঁদের ব্যস্ততাও অনেকটা কমে গেছে। এক যুগ আগেও প্রতিদিন গড়ে একহাজার থেকে দেড় হাজার চিঠি বিলি হতো।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় সেসব ঝুলন্ত ডাকবাক্স (রাস্তার পাশে কোনো পিলারের সঙ্গে লাগানো)। ছিল তাও এখন আর চোখে পড়েনা । যদিও দু একটি আছে সেইসব ডাকবাক্সের কোনোটা মরচে পড়ে ফুটো হয়ে গেছে। কোনোটায় দীর্ঘদিন ধরে তালা নেই। আবার কোনোটা ভেঙে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ডাকবাক্সের এমন দুরবস্থার পাশাপাশি এগুলো নিয়মিত খোলাও হয় না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন ।
ডাকপিয়নের পথ চেয়ে বসে থাকা ফিডব্যাকের ‘চিঠি’ গানের প্রসঙ্গে ব্যান্ডটির দলনেতা ফোয়াদ নাসের বাবু সাংবাদিকদের বলেন, গানটি ৮৭ সালের। এর গীতিকার ও শিল্পী ছিলেন মাকসুদুল হক। ওই সময় ভালোবাসার কথা জানাতে মানুষ চিঠি বা টেলিফোনকেই বেছে নিত। মনের কথা জানিয়ে লেখা চিঠির উত্তরে কী আসে তা জানতে ডাকপিয়নের অপেক্ষায় বসে থাকা ছাড়া তেমন কোনো উপায়ও ছিল না। তিনি বলেন, ‘এখন দিন পাল্টেছে। চিঠির কদর কমেছে। ডাকপিয়নও বেকার হয়ে গেছেন।’
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত কবিতা ‘রানার’-এ কবি লিখেছেন ‘কত চিঠি লেখে লোকে—/ কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখ ও শোকে।’ স্মৃতি, প্রেম-আবেগ, সুখ-দুঃখ এখনো আছে মানুষের। তবে অন্যকে তা জানানোর ভাষা ও মাধ্যম বদলে দিয়েছে প্রযুক্তি। চাইলেই মহূর্তে মুঠোফোনে কথা বলা যায় কাছে-দূরে, বিদেশ-বিভুঁইয়ে থাকা স্বজনের সঙ্গে। মুঠোফোন ও ইন্টারনেটে স্কাইপির বদৌলতে ভিডিও কলের মাধ্যমে চাইলেই যে কারও সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি সরাসরি তাঁর ছবি দেখার সুযোগও এখন হাতের নাগালে। চিঠির জায়গা দখল করেছে এসএমএস, ফেসবুক, টুইটার, ই-মেইলসহ আরও অনেক প্রযুক্তি কী…।
‘রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে,/ দস্যুর ভয় তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে’—কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ কবিতার রানারেরও (আগে এক এলাকার চিঠি অন্য এলাকার ডাকঘরে যে পৌঁছে দিত) বুঝি এখন আর অবসর ফুরোয় না।
চিঠির ব্যবহার কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বিশেজ্ঞদের মতে , সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেট, ফেসবুক, সেলফোনের মাধ্যমে মানুষ দ্রুত একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছে। জীবনমান প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগের বিষয়টিতে নির্ভরশীলতা কমে যাচ্ছে। তবে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ডাক বিভাগও এখন বদলাচ্ছে। ডাক বিভাগের মাধ্যমেও এখন দ্রুত যেকোনো স্থানে সহজেই টাকা পাঠানো যায়।
তথ্য সূত্র : বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক