সার্বজনীন পহেলা বৈশাখ প্রাণের উৎসবকে বরণ করে নিতে অন্যান্য জেলার ন্যায় শেরপুরবাসীও বসে আছে অধীর আগ্রহে। পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির এক আনন্দময় দিন। আবহমানকাল থেকে যথাযথভাবে এ পহেলা বৈশাখ উদযাপন করছে বাঙালি জাতি।
১৪ এপ্রিল শুক্রবার বাঙালির প্রাণের উৎসাহ-উদ্দীপনার উৎসব বাংলা নববর্ষ তথা বৈশাখী উৎসবে ফিরে আসবে ১৪২৪ বঙ্গাব্দ। উৎসবের আমেজ সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে ইতোমধ্যে শেরপুর জেলা প্রশাসন সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। বৈশাখী আনন্দে নিজেকে সাজাতে ইতোমধ্যে কেউ কেউ বৈশাখী সাজে রাঙানোর জন্যে নতুন জামা কাপড় কিনে রেখেছে। কেউবা কেনার প্রস্তুতি নিয়ে ঘুরাফেরা করছে কাপড়ের মার্কেটগুলোতে।
বাঙালি তার নিজস্ব জাতি সত্ত্বার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য যতগুলো উৎসব পালন করে তার মধ্যে বৈশাখ বরণ বা বাংলা সনকে বরণ অন্যতম। বৈশাখ বরণের সাথে যে অনুষ্ঠানটি নিবিড়ভাবে জড়িত তা হল বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। মূলত সমগ্র বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিম বঙ্গে বৈশাখ মাসের পহেলা দিন থেকে একযোগে যে মেলা অনুষ্ঠিত হয় তাকেই বৈশাখী মেলা বলা হয়। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে যে সকল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় তার মধ্যে যেমন পান্তা-ইলিশ থাকে তেমনি মেলাও বসে।
বৈশাখী মেলার মাধ্যমে বাঙালিদের মধ্যে একটি মেল বন্ধনের সূতিকাগার রচিত হয়। সকল ভেদাভেদ ভুলে বাঙালিরা তাদের প্রকৃত সংস্কৃতিকে লালন এবং ধারণ করার শপথে অগ্রগামী হয়। যেহেতু বাংলা নববর্ষ সম্রাট আকবরের সময় থেকে পালন করা হতো এবং সে সময় বাংলার কৃষকরা চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য ভূ-স্বামীদের খাজনা পরিশোধ করত। এ উপলক্ষে তখন মেলা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো।
পরবর্তীতে বৈশাখ উপলক্ষে যে মেলার আয়োজন করা হতো সে মেলাকে “বৈশাখী মেলা” নামে নামকরণ করা হয়। বৈশাখী মেলার সূচনার সঠিক তারিখ নির্ধারিত করা না গেলেও এ মেলা যে বাংলা বঙ্গাব্দ পালনের সূচনা থেকেই সূচিত হয়েছে তাতে সন্দেহ থাকার খুব বেশি অবকাশ নেই। বাংলা নববর্ষের মূল আকর্ষণ বৈশাখী মেলা। মূলত নতুন বছর বরণকে উৎসবমুখর করে তোলে এ মেলা। বৈশাখী মেলা মূলত সার্বজনীন লোকজ মেলা হিসেবে স্বীকৃত। এ মেলা উপলক্ষে উপস্থিত দর্শকদের আনন্দ দেয়ার জন্য নানাবিধ আয়োজন করা হয়।
এছাড়া শিশু-কিশোরদের খেলনা, মহিলাদের সাজ-সজ্জার সামগ্রী ইত্যাদি এবং বিভিন্ন লোকজ খাদ্যদ্রব্য যেমন- চিড়া, মুড়ি, খৈ, বাতাসা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি প্রভৃতির বৈচিত্র্যময় খাবারের সমারোহ থাকে। মেলায় বিনোদনেরও ব্যবস্থা থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগায়ক ও লোকনর্তকদের উপস্থিত করা হয়। তারা যাত্রা, পালাগান, কবিগান, জারিগান, গাজীর গানসহ বিভিন্ন ধরনের লোকসংগীত বাউল-মারফতি-মুর্শিদি-ভাটিয়ালী ইত্যাদি বিভিন্ন আঞ্চলিক গান পরিবেশন করে। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নাটক, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদি বৈশাখী মেলার বিশেষ আকর্ষণ।
এছাড়া শিশু-কিশোরদের আকর্ষণের জন্য থাকে বায়োস্কোপ। শহরাঞ্চলে নগর সংস্কৃতির আমেজে এখনও বৈশাখী মেলা বসে এবং এই মেলা বাঙালিদের কাছে এক অনাবিল আনন্দের মেলায় পরিণত হয়। বৈশাখী মেলা বাঙালির আনন্দঘন লোকজ সংস্কৃতির ধারক।
সেই লোকজ সংস্কৃতিকে ধারণ করে শেরপুরের ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী, নকলা ও শেরপুর সদরউপজেলা সাজছে বর্ণিল সাজে। থাকছে বৈশাখের বর্ণাঢ্য র্যালী, পান্তা-ইলিশ উৎসব, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও সীমান্ত অঞ্চলের গারো আদিবাসী পল্লীতেও চলছে বর্ষবরণের ব্যাপক প্রস্তুতি।পুরো শেরপুর জেলা জুড়ে চলছে বৈশাখের আগাম উৎসবের আমেজ।