আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বছর আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারদর কম, সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি ও পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগারের অভাবে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ৪ জুলাই, বুধবার দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় এক কোটি ২১ লাখ টন আম উৎপাদন হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তার চেয়েও বেশি আম উৎপাদন করা হয়েছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত আম উৎপাদন খরচের অর্ধেকেরও কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। এ ছাড়া অনেক আম নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা।
দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে ফল উৎপাদন ও সংরক্ষণব্যবস্থা নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও। এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে আম পাড়ার আগে এবং পাড়ার পর থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত মোট ৫৪.৫ শতাংশ নষ্ট বা অপচয় হয়। এর মধ্যে কৃষক পর্যায়ে ১৬.৬ শতাংশ, সেখান থেকে পাইকারি পর্যায়ে আসতে ১.৯ শতাংশ, সেখান থেকে ভোক্তা বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেতার কাছে পৌঁছা পর্যন্ত আরও ৩৬ শতাংশ অপচয় হচ্ছে। সঠিকভাবে গাছ থেকে আম সংগ্রহ, প্যাকিং, উন্নতমানের ঝুড়ি ব্যবহার, সংরক্ষণ পদ্ধতি ও পরিবহনে সচেতন থাকলে অপচয় ১৮.৪ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব।
আম রফতানি বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের ফল তেমন রফতানি হয় না। এ বিষয়ে আম-কাঁঠাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সানড্রি অ্যাপেটিট লিমিটেডের মালিক রেজাউল ইসলাম কল্লোল বলেন, ‘মূলত ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের আম যায়। তবে সেটা শুধু বাঙালিদের জন্য।
বিশ্ব বাজারের জন্য উন্মুক্ত নয়। কারণ পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়ার আমের যে কোয়ালিটি তার চেয়ে আমাদের আমের কোয়ালিটি অনেক নিম্নমানের। ব্যাগিং পদ্ধতির মাধ্যমে এখন কিছু বেশি আম পাঠাতে পারছি আমরা। তবে মানোন্নয়নের কাজ রপ্তানিকারককেই করতে হচ্ছে।’
সংরক্ষণ পদ্ধতি বছরের একটা মৌসুমেই শুধু আমের দেখা মেলে। ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ায় ‘হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট’ পদ্ধতির ব্যবহারে আম সংরক্ষণ করা হয়। যেটি বাংলাদেশে নেই বললেই চলে।
এই প্রক্রিয়ায় আমকে প্রায় এক বছর পর্যন্ত খাওয়ার উপযোগী রাখা যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর একটি হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের জন্য মেশিন তৈরি করেছে। সেটি এখনো উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
আম প্রক্রিয়াজাতকরণ আর আম প্রক্রিয়াজাতের একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। রাঙামাটির নানিয়ার চরে হর্টিকালচার সেন্টারের তত্ত্ববধানে প্রকল্পটির কাজ চলছে।
দেড় কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে স্থাপনা নির্মাণ ও মেশিনপত্র আনার কাজ চলছে। যদিও পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে রাঙামাটি ও রাজশাহী অঞ্চলে দুটি প্রকল্প নিতে চেয়েছিল অধিদফতর।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ওই প্রকল্পের আওতায় পেঁপে, কলা, আনারস, আম, কাঁঠাল এবং সমজাতীয় যেকোনো ফলের চিপস বানানো হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ কেজি চিপস উৎপাদিত হবে যা সারা বছর বাজারজাত করা সম্ভব হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ‘বছরভিত্তিক ফল উৎপাদন কার্যক্রমের মাধ্যমে পুষ্টির উন্নয়ন’ প্রকল্পের উপ-পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে দুটি প্রতিষ্ঠান করার বাজেট চেয়েছিলাম, একটি পেয়েছি।
দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে বলে আমরা আশাবাদী। আমাদের প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হলে অনেকেই প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রস্তুত করতে এগিয়ে আসবে। তবে যারা আসতে চায় আমরা তাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।’
সূত্র: প্রিয়.কম।