‘বৃষ্টি আইলে নদীর পানি ঘরে ঢুকে। ঘরে থাকবার পাই না, ঘুমাবার পাই না। বউ পুলাপাইন নিয়া কষ্টে আছি। ভোগাই নদীর পাড় ব্লক কইরা বান (বাঁধ) দিয়া দেইন, আমরা আর কিছইু চাই না।’ এভাবেই কথাগুলো বললেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি খরস্রোতা ভোগাই নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা সদর ইউনিয়নের মধ্য খালভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা হোসেন আলী (৭৫)।
জানা গেছে, সম্প্রতি নালিতাবাড়ী উপজেলায় অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় নালিতাবাড়ী ইউনিয়নের ভোগাই নদীর মধ্য খালভাঙ্গা গ্রামে প্রায় ৪০০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। ওই ভাঙ্গন অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে নদীতীরবর্তী মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। ভিজে নষ্ট হয়ে যায় ঘরে রাখা বোরো ধান। ভেসে যায় পুকুরের মাছ। সেইসাথে নষ্ট হয় আমন আবাদের বীজতলা। ঢলের পানিতে একাকার হয় নদী আর বসতবাড়ি। এমন আকষ্মিক বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দারা।
ভাঙ্গন অংশটি মেরামত না করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই নদীর পানি বেড়ে গিয়ে ঘরে পানি ওঠে। মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। তাই আকাশে মেঘ জমলেই আতংক আর দুশ্চিন্তা বাড়ে নদীতীরবর্তী বাসিন্দাদের। এসময় তাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। এমনকি চুলা না জ্বলায় না খেয়ে থাকতে হয় তাদের। এমন সমস্যা গত দুই বছর ধরে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে ভাঙ্গা অংশে মাটি কেটে মেরামত করা হলেও তা টেকসই হচ্ছে না। গ্রামবাসীর দাবী খালভাঙ্গা গ্রামের ওই ভাঙ্গন অংশে ভোগাই নদীতে ব্লক করে নদীর বেড়িবাঁধ দিলে এটির স্থায়ী সমাধান হবে।
সংশ্লিষ্ট নালিতাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বলেন, মধ্য খালভাঙ্গা গ্রামের ভাঙ্গন অংশটি পরপর তিনবার মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু ওই বাঁধ টেকে না। ভোগাই নদীর তীব্র স্রোতের তোড়ে প্রতি বছর ভেঙ্গে যায়। এখানে ব্লক তৈরি করে বাঁধ দিলে টেকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের স্বল্প বাজেটে তা সম্ভব না। তাই আমরা বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, খালভাঙ্গা গ্রামের বেড়িবাঁধ শুধু বর্ষা মৌসুমে নয়, বোরো মৌসুমে এর ভাটির দিকে স্থাপিত রাবারড্যামে পানি আটকানো হলে নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে ঘর বাড়িতে পানি ওঠে। সেজন্য ব্লক তৈরি করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।