পরশু রাতেও ফুটবল সমর্থকরা জানতো চোটে জর্জরিত ফরাসিদের আলোর দিশারী দেখাবেন করিম বেনজেমা। কিন্তু গতকাল ঘুম থেকে উঠে আঁতকে উঠলেন সকলে! এটা কি হলো? ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে গেলেন বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের অন্যতম সেরা তারকা! এই স্ট্রাইকার গত মাসেই ব্যালন ডি-অর শিরোপা জয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে জানিয়েছিলেন তিনি দেশকে বিশ্বকাপ জেতাতে চান। কিন্তু হৃদয়গ্রাসী চোটের কারণে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল বেনজেমার সেই স্বপ্ন। আর তাতে ফিরে এসেছে ৪৪ বছর আগের স্মৃতি। ১৯৭৮ সালের পর এই প্রথম কোনো বিশ্বকাপ হচ্ছে, যেখানে খেলা হচ্ছে না বর্তমান ব্যালন ডি’অর জয়ীর।
বেনজেমার আগে সবশেষ এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল ডেনমার্কের অ্যালান সিমনসেনের। ১৯৭৭ সালে ব্যালন ডি’অর জেতেন ওই সময়ে জার্মান ক্লাব বরুশিয়া মনশেনগøাডবাখে খেলা এই স্ট্রাইকার। পরের বছরের জুনে আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি তিনি।
চলতি মৌসুমের শুরুতে হাঁটুর ইনজুরিতে পড়েছিলেন বেনজেমা। এরপর পান পায়ের পেশিতে চোট। ফলে বিশ্বকাপ বিরতির আগে রিয়াল মাদ্রিদের শেষ চার ম্যাচে মাঠে নামতে পারেননি ফরাসি তারকা। তবে, যে ফুটবলার জীবনের ৩৪ বসন্ত পরে ব্যালন ডি-অর জেতে, সে কি হাল ছাড়ার পাত্র? মোটেই না। ইনজুরি কাঁটিয়ে শনিবার ফ্রান্স দলের অনুশীলনে যোগ দেন তিনি। তবে পেশিতে ব্যথার কারণে অনুশীলন শেষ করতে পারেননি বেনজেমা। এরপর পরশু মাঝরাতে ব্যালন ডি-অর জয়ী রিয়াল মাদ্রিদ তারকার, বিশ্বকাপের খেলার সম্ভাবনা শেষ বলে জানিয়েছে ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশন (এফএফএফ)। তারা বলেছে, ‘পুরো ফ্রান্স দল বেনজেমার বেদনার অংশীদার। আমরা সবাই তার দ্রæত আরোগ্য কামনা করছি। ফ্রান্সের ম্যানেজার দিদিয়ের দেশম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘করিমের জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে, এই বিশ্বকাপকে সে বড় লক্ষ্য বানিয়েছিল। ফ্রান্স দলে নতুন এই ধাক্কার পরও, স্কোয়াডের বাকিদের ওপর আমার প‚র্ণ আস্থা আছে। সামনে যে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, তাতে জিততে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
২০১৪ বিশ্বকাপ দলের সদস্য ছিলেন বেনজেমা। পরের বছর সেক্সটেপ নিয়ে সতীর্থ ম্যাথু ভালবুয়েনাকে বø্যাকমেল করার অভিযোগে সাড়ে ৫ বছর জাতীয় দলে বিবেচনায় ছিলেন না বেনজেমা। যে কারণে ২০১৮ সালে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয় উপভোগ করতে হয়েছিল দর্শক হিসেবে। এরপর দারুণ পারফরম্যান্সে ঠিকই দেশমের মন জয় করেন এই স্ট্রাইকার। গত বছর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের আগে ফ্রান্স দলে ডাক পান বেনজেমা। তারপর থেকে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে খুব গুরুত্বপ‚র্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন তিনি। তবে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে বেনজেমা জানালেন দলের একটা গুরুত্বপুর্ণ জায়গার কথা ভেবেই, স্কোয়াড থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সামাজিক মাধ্যম টুইটার ও ইন্সটাগ্রামে গতকাল হৃদয়ভাঙ্গা বেনজেমা লিখেছেন, ‘আমার জীবনে আমি কখনোই হাল ছাড়িনি; কিন্তু আজ রাতে আমার দলের কথা ভাবতে হবে যেমনটা আমি সবসময়ই করি, তাই যৌক্তিক ভাবনা আমাকে বলছে আমার জায়গাটা এমন কাউকে ছেড়ে দিতে যে দারুণ একটি বিশ্বকাপ কাটাতে আমাদের দলকে সাহায্য করতে পারবে। আপনাদের সকল সমর্থন যোগানো বার্তার জন্য ধন্যবাদ।’
এমনিতেই একটা কাকতাল আছে যে, বিশ্বকাপ জয়ী দল পরের আসরে গ্রæপ পর্ব থেকেই কাটা পরে। ফ্রান্সকে কেবল সেই কুংস্কারের বিপক্ষে না, বিশ্বকাপ শুরুর বহু আগে থেকেই বেশ ভালোভাবে ভোগাচ্ছে ইনজুরি। স্কোয়াড ঘোষণার আগেই ছিটকে গেছেন দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই মিডফিল্ডার পল পগবা ও এনগোলো কন্তে। এরপর বিশ্বকাপের অনুশীলনের সময় ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে যান লাইপজিগের স্ট্রাইকার ক্রিস্টোফার এনকুকুর। তবে শরীরি ভাষায় এরপরও ফরাসিদের খুব শক্তি মনে হচ্ছিল। তবে বেনজেমার প্রস্থানটা এখন বিশাল বড় ব্যাপার তাদের জন্য।
বেনজেমার শৈশবে ছিলো ভারি শরীর, তা নিয়ে অনেক খোঁচা শুনতো সহপাঠীদের। তবে গোলচর্মাকার বলটিই ছিল তার সঙ্গী। বেনজেমা জীবনের সকল না পাওয়া এই ফুটবল থেকেই পেতে চেয়েছিলেন। তার প্রথম ক্লাব লিওর সথির্তরাও তাকে খোঁচাতো নানান কারণে। ছোট্ট বেনজেমা তখন বলেছিলেন, ‘আমাকে নিয়ে ঠাট্টা কোরো না। আমি বল বয় থেকে এখন তোমাদের সতীর্থ। একদিন ১০ নম্বর জার্সিটা নিজের করে নিবো।’ সে কথা রেখেছিলেন বেনজেমা। তবে সর্বনাশা চোট, দেশকে বিশ্বসেরা করার প্রতিশ্রæতি রক্ষা করতে দিলো না।