গাছের পাতা একসঙ্গে সেলাই করে বাসা বানানোর জন্য এই পাখি খুবই জনপ্রিয়। এই চড়ই জাতীয় পাখিকে বৈশিষ্ট্যমুলকভাবে দেখা যায় খোলা খামার জমি, ঝোপঝাড়, বন ও বাগানে। দর্জি পাখি নামটা এসেছে বাসা গড়ার ঢঙ থেকে। আগে গ্রামবাংলার আনাচে-কানাচে ঝোপঝাড়ে, বনজঙ্গলে ও বাগানে দেখতে পাওয়া যেত কিন্তু এখন আর তেমনটা চোখে পড়েনা।
পরাগায়নে সাহায্য করে এই পাখি। ফুলের মধু খেয়ে বিভিন্ন ধরনের ফুলে ফুলে ঘুরে পরাগায়নেও সাহায্য করে থাকে। ফসলের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খেয়ে পরিবেশ সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। হরেক নামে ডাকা হয় টুনটুনি পাখিকে তার হিসাব করা মুশকিল।অঞ্চলভেদে বিভিন্ন নামে ডাকা হয় এই টুনটুনি পাখিকে যেমন টুনি, মধুচুষকি, দুগাটুনটুনি, বেগুনটুনটুনি, মৌটুসি, নীলটুনটুনি,দর্জি, মৌটুসকিসহ আরও কত যে নামে ডাকে এখন বিলুপ্ত প্রায় সেই ছোট নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর পাখি টুনটুনি। যদিও পাখিদের মধ্যে বাবুই পাখিকে অার্কিটেক্ট পাখি বলা হলেও এই চোট পাখি টুনটুনির নির্মান শৈলী সম্পুর্নভাবে আলাদা।কারে এই ছোট পাখিটাকে যতটা অামরা চালাক ভাবিনা কেন প্রকৃত পক্ষে ততটা চালাক নয় একটু বোকা প্রকৃতির এরা সবসময় মানুষের খুব কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে। এরা চঞ্চল প্রকৃতির পাখি এক জায়গায় স্হির থাকতে চায়না, দুরন্ত বালকের মত ছুটে চলে। সবসময় গাছের ডালে লাফা-লাফি করে ওড়ে বেড়ায়। ডাল-ডালে ওড়ে বেড়ার সময় পিঠের উপরের লেজ নাড়িয়ে টুনটুন শব্দ করে ওড়ে
বেড়ায়। চোখে না দেখলে এই টুনটুনি পাখির ডাক শুনে মনেই করতে পারবেননা যে
এরা আকারে এতই ছোট।গ্রামবাংলার মানুষেরা খুব আদর করে একে দর্জি পাখি বলে ডেকে থাকেন। এই দর্জি পাখির ডাক খুবই তীব্র ও অনেক দূর থেকে শোনা য়ায়। এই দর্জি পাখিটি ঠোঁট দিয়ে গাছের পাতা সেলাই করে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে খুবই সুন্দর বাসা তৈরি করে থাকে। এরা সাধারনত ঝোপ-ঝাড় জাতীয় গাছ/ ছোট-মাঝাড়ি উঁচু গাছের পাতায় বাসা বাধঁতে খুব পছন্দ করে -যেমন খোকশা গাছ, লেবু, ডুমুর, সৃর্যমুখী, কাঠবাদাম ইত্যাদি। তবে এরা সবচেয়ে বেশী বাসা বাধঁতে পছন্দ করে খোকশা গাছে। স্ত্রী ও পুরুষ উভয় মিলে গাছের এক থেকে তিনটি পাতা দিয়ে সেলাই করে বাসা তৈরি করে থাকে। একটি বাসা তৈরি করতে স্ত্রী এবং পুরুষ টুনটুনির চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এরা তুলা,সুতা, লতা, গরু- ঘোড়ার লেজের চুল, পালক মিশিয়ে দৃষ্টিনন্দন বাসা তৈরি করে। টুনটুনি পাখির বাসা তৈরি এবং প্রজনন মৌসুম মাঘ মাসের শেষের দিকে ও ফাল্গুন থেকে অাশ্বিন মাসের মধ্যে বাসা বাধাঁ শেষ হলেই চার থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে। স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই ডিমে তা দিয়ে দশ দিনের মধ্যে ছানা ফুটানোর পরে ছানাসহ বাসা পরির্বতন করে।
বছরের প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী টুনটুনি দুই থেকে তিন বার ডিম দিয়ে ছানা ফুটায়। এসময় কেউ টুনটুনির বাসার কাসে আ সলে স্ত্রী এবং পুরুষ টুনটুনি মিলে ওড়া-ওড়ি ও টুনটুন শব্দ করে ডিম এবং তাদের বাসা রক্ষা করার জন্য।অনেক সময় পাতা গাছ থেকে ঝড়ে পড়ে ডিম ও ছানাসহ নষ্ট হয়ে যায়। গ্রামের চোট ছেলে-মেয়েদের টুনটুনির বাসার প্রতি প্রবল আকর্ষন থাকে। অনেক সময় গ্রামের ছেলে-মেয়েরা টুনটুনি পাখির বাসা, ডিম বা ছানা নষ্ট করে। আজকাল টুনটুনি পাখির দৃষ্টিকাড়া বাসাও খুব তেমন একটা চোখে পড়ে না।বন উজাড় মনোভাবের কারর্নে অনেক পাখিই ধীরে ধীরে আজ বিলুপ্তির পথে। প্রকৃতিও হুমকির মুখে সবুজ বনায়নের অভাবে।