ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শুক্রবার (১৭ জুন) বিকেলে ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, নদ-নদীর পানি বাড়ায় জেলা সদরের ঘোগাদহ, যাত্রাপুর, হলোখানা, পাঁচগাছি, মোগলবাসা, ভোগডাঙ্গা, নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা, নুনখাওয়া, বল্লভেসের খাস, কালীগঞ্জ, বেরুবাড়ি, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, বুড়াবুড়ি, সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ, চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ, অষ্টমীর চর, রমনা, নয়ারহাট, চিলমারী সদর, ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট, পাইকের ছড়াসহ চর ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়ন, রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা, ছিনাইসহ বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকার ধান, পাট ও শাকসবজি ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।
এসব এলাকার মানুষ নৌকা ও কলা গাছের ভেলায় করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করছেন। অনেকের ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তারা নৌকাযোগে ঘরের জিনিসপত্র উঁচু স্থানে তুলছেন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পরিবার নিয়ে আতঙ্কে রাত কাটছে তাদের।
পাঁচগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমার ইউনিয়নের সাতটি ওয়ার্ডের প্রায় ২০-২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে পানিবন্দি মানুষের তালিকা করার নির্দেশনা পেয়েছি।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমার ইউনিয়নের ১৫-২০টি গ্রামের প্রায় পাঁজ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া প্রায় দেড় হাজার পরিবারের বসতঘরে পানি প্রবেশ করেছে। পানিবন্দি এলাকার সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছি।
মোগলবাসা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনামুল হক বলেন, ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমার ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় চার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া ইউনিয়নের সমস্ত আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমার ইউনিয়নের ১১-১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। চারটি বাড়ির বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া চার কিলোমিটার রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা বলেন, ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমার ইউনিয়নের প্রায় ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে অন্তত ৩০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া চর আরাজী পলাশবাড়ী এলাকায় ধরলার ভাঙনে এরইমধ্যে কয়েকটি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে রক্ষার আশ্বাস দিয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে তিস্তা ও দুধকুমার নদের পানি বাড়ছে। তবে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এরইমধ্যে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে। কারও প্রয়োজন হলে আমরা তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ করতে পারবো।