আর্থিক অনটনের কারনে অষ্টম শ্রেণির পর আর লেখাপড়া করতে পারেনি বাদশা মিয়া। হাতের লেখা সুন্দর থাকায় তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে এই চিত্রকর্ম শুরু করেন। তিনি সাইনবোর্ড লেখা ছাডাও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কক্ষে সজ্জিতকরন, প্রকৃতি ও গ্রাম বাংলার চিত্র একে থাকেন। তার বাড়ির প্রবেশ পথের দেয়ালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংসদ উপনেতা ও স্থানীয় এমপি অগ্নিকন্যা বেগম মতিয়া চৌধুরী ছবি একে রেখেছেন তিনি। এছাড়া তার বাড়ির ভিতরে নানা চিত্রকর্ম আঁকা রয়েছে। এসব চিত্রকর্মের পাশাপাশি তিনি ভুট্টা গাছের বাকল দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বেগম রোকেয়াসহ বিভিন্ন গুণীজনের শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন তিনি।
এসব কাজের পাশাপাশি তিনি ভাবলেন সমাজ এবং দেশের জন্য ভালো একটা কিছু করার। ঠিক এমন সময়ে স্থানীয় একটি মসজিদের নাম লেখার কাজ পান তিনি। এরপর সেই মসজিদের নাম লিখে এবং অন্যান্য কাজ শেষে কোন পারিশ্রমিক বা টাকা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মসজিদ কমিটি তাকে অনেক জোরাজোরি করেও রিকশা ভাড়া পর্যন্ত দিতে পারেননি। সেদিন থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন প্রতি শুক্রবার তার কাজের ফাঁকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মসজিদগুলোতে নাম লেখাসহ মসজিদের ভিতর ও বাহিরে বিভিন্ন দোয়া-কালাম ও সূরা লিখবেন বিনা পারিশ্রমিকে। তাই তিনি প্রি শুক্রবার সকাল বেলায় রং তুলি ও রঙের কৌটা নিয়ে তার নিজস্ব বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পূর্বে নির্ধারিত মসজিদে দোয়া-কালাম লিখার উদ্দেশ্যে। যেসব মসজিদে তিনি লেখালেখির কাজ করেন ওইসব লেখালেখির পারিশ্রমিক প্রায় তিন থেকে চার হাজার টাকা হলেও তিনি তা নিচ্ছেন না। তার এই মহান কাজের খুশি স্থানীয় মসজিদ কমিটির লোকজন ও ইমামরা বেশ প্রশংসা করে তার জন্য দোয়া করেন।
চিত্রকর বাদশা মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ইতিপূর্বে তিনি মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ৯৯টি ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ’ এর লোগো একে দিয়েছেন বিনা পারিশ্রমিকে। সর্বশেষ লোগোটি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু যে স্কুলে লেখাপড়া করেছেন সেই স্কুলে গিয়ে ১০০তম লোগো আকার আশা করেছিলেন। কিন্তু নানা প্রতিকুলতার কারনে তিনি তার শেষ ইচ্ছে পুরণ করতে পারেননি। এখনো তার ওই ইচ্ছাটা রয়েছে। এছাড়া তিনি আমৃত্যুকাল পর্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকার মসজিদগুলোতে যেখানে মসজিদ কমিটির সামর্থ্য নেই সেই সব মসজিদে নাম, সুরা ও অন্যান্য দোয়া কালাম লিখে যাবেন।