ইট-পাথরের জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে প্রকৃতির সান্নিধ্যের বিকল্প হয় না। এমনই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ মিলবে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পানিহাটা-তারানি পাহাড়ে। তাও আবার বিনা টিকেটে।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সবুজ বন আর খরস্রোতা ভোগাই নদীর মিতালী আপনার মনকে উদ্বেলিত করবে। কিছুক্ষণের জন্য আপনি ভুলে যাবেন শহুরে জীবনের ক্লান্তি-একঘেয়েমি। প্রকৃতির ভালবাসায় হারিয়ে যাবেন স্বপ্নময় রাজ্যে।
পানিহাটা-তারানি পাহাড়ে কি দেখবেন?
সীমান্তবর্তী এ পাহাড়ি অঞ্চলের চিরসবুজ বনানী আপনাকে দেবে মনের তৃপ্তি। পানিহাটা পাদ্রি মিশনের পশ্চিমে উঁচু পাহাড়ে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই চোখে পড়বে মেঘালয়ের নীলাভ-সবুজ তুরা জেলা। যেখানে মেঘ-কুয়াশার আবরণে লুকোচুরি খেলে শত শত টিলা। আরো দেখবেন মেঘালয় রাজ্যের ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড়কে ফাঁকি দিয়ে তুড়ার অববাহিকায় বয়ে চলা খরস্রোতা ভোগাই নদী। যার একপাশে সাদা কাশফুলে ঢাকা বন আর অন্যপাশে শত ফুট উঁচু সবুজ পাহাড়। সৌন্দর্যের দেখে মিলবে ভোগাই নদীর তলদেশেও। এখানে স্বচ্ছ পানির নিচে গড়াগড়ি খায় নুড়ি পাথর। যা দেখে আপনি হারিয়ে যাবেন প্রবালে ছাওয়া সমুদ্র সৈকতের কোনো স্মৃতিতে। পূর্ব দিকের কয়েকটি পাহাড়ের গা ঘেঁষে ভোগাই নদীতে মিশেছে ছোট একটি ঝরনা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ লীলাভূমিতে মানুষের দেখা পেতে আপনাকে যেতে হবে পানিহাটা পাদ্রি মিশনে। সেখানে সারাক্ষণ কোলাহলে মেতে থাকে শিশু-কিশোররা।
সৌন্দর্য্যের ভাগটা শুধু পানিহাটাই নিতে পারেনি। ভাগ বসিয়েছে পার্শ্ববর্তী তারানি পাহাড়। দুটো পাহাড়ই সৌন্দর্যপিপাসুদের আকর্ষণ করে এক অমোঘ মায়ায়। তাই তো সবুজ চাদরে মোড়া পাহাড়ের রাজ্যে প্রতিনিয়ত ছুটে যান হাজারো ভ্রমণপ্রেমী।
শুধু সৌন্দর্যই নয়, পানিহাটা-তারানির মানুষের কাছে আপনি শুনতে পারবেন বন্যহাতির তাণ্ডবের লোমহর্ষক গল্প। এখানকার গারো সম্প্রদায়ের প্রতিনিয়ত সংগ্রামের গল্প আপনাকে শিউরে দেবে। আরো পাবেন গারোদের অকৃত্রিম আতিথেয়তা।
পানিহাটা মিশনের পাদ্রি রোমিও চাম্বুগং বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় পানিহাটা-তারানি পাহাড় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে প্রতিবছর দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভিড় জমান। দুটো পাহাড় ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে বাড়বে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা, আয় হবে বিপুল রাজস্ব।
রামচন্দ্রকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খোকা বলেন, আগে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না। এখন সরকারি উদ্যোগে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পানিহাটা-তাড়ানি পাহাড়ে দর্শনার্থী বেড়েছে। আশা করি, সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নেয়া হলে এ অঞ্চল দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকায় রূপ নেবে।
যাওয়া-থাকা
রাজধানীর মিরপুর, মহাখালী, সায়েদাবাদ থেকে শেরপুরে যাওয়ার জন্য বিআরটিসি, হাওলাদার ট্রাভেলস, হাজী এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন বাস রয়েছে। শেরপুর জেলা শহর থেকে সিএনজিতে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে নাকুগাঁও স্থলবন্দরে যেতে হবে। এরপর ভোগাই সেতু হয়ে ২-৩ কিলোমিটার গেলেই আপনি ঢুকে পড়বেন পানিহাটা-তাড়ানি পাহাড়ি এলাকায়। এছড়া নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে যেতে হলে সড়ক পথে ১৯ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে রামচন্দ্রকুড়া যেতে হবে। সেখান থেকে গড়কান্দা চৌরাস্তা মোড় হয়ে সোজা উত্তরে প্রথমে নাকুগাঁও পরে পূর্ব দিকে মোড় নিয়ে ভোগাই ব্রিজ হয়ে পূর্বে ২-৩ কিলোমিটার গেলেই চায়না মোড়। এখান থেকে কিলোমিটারখানেক পাড়ী দিয়েই পানিহাটা-তারানির সবুজ শ্যামল পাহাড়ি এলাকা।
পানিহাটা-তাড়ানি পাহাড়ের কাছে ভালো কোনো থাকার জায়গা নেই। রাত্রিযাপনের জন্য আপনাকে জেলা শহর বা উপজেলা সদরের হোটেল বেছে নিতে হবে। অথবা বারমারী বাজারের নাহার প্লাজা আবাসিক হোটেলেও থাকতে পারেন।