শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে উঠতি আমন আবাদের দেশীয় জাতের পাইজাম ধানের ক্ষেতে আগাছানাশক আনতে গিয়ে ব্যবসায়ীর দেওয়া ভুল কীটনাশক প্রয়োগে ১০৫ শতক জমির ধানক্ষেত পুরোটাই জ্বলে নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজের একমাত্র সম্বল হারিয়ে দিশেহারা রাশেদুজ্জামান (৩৫) নামের ওই কৃষক। প্রথমদিকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও এখন বেঁকে বসেছেন কীটনাশক বিক্রেতা আব্দুস সাত্তার। উপজেলার রূপনারায়নকুড়া ইউনিয়নের গাছগড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার গাছগড়া গ্রামের কৃষক রাশেদুজ্জামান স্থানীয় মাথাফাটা বাজারের কীটনাশক ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তারের কাছে গিয়ে তার উঠতি দেশীয় পাইজাম ক্ষেতের আগাছা দমনের জন্য ‘ফিল্টার’ কীটনাশক চান। এসময় বিক্রেতা ‘ক্লীনকোয়াট-২৪ এসএল’ নামে একটি কীটনাশক তাকে ধরিয়ে দিয়ে কার্যকারিতার গ্যারান্টি দেন। কথামতো রাশেদ পরদিন শুক্রবার ওই কীটনাশক তার একুশ কাঠা (১০৫ শতক) দেশীয় পাইজাম ধানের ক্ষেত্রে স্প্রে করেন। বিকেল নাগাদ পুরো জমির ধান গাছ জ্বলে নষ্ট হতে শুরু করে। এমতাবস্থায় দ্রুত রাশেদ কীটনাশক বিক্রেতা সাব্বির এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী সাত্তারের কাছে গেলে তিনি ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেন এবং ধান গাছের চারা সতেজ করতে আরও কিছু পরামর্শ দেন। কিন্তু দিন কয়েক গড়ালে কীটনাশক ব্যবসায়ী সাত্তার ক্ষতিপূরণের কথা অস্বীকার করতে শুরু করেন। এমতাবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক রাশেদ প্রতিকার চেয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
এলাকাবাসী আলমাস (৫২), আব্দুল হালিম (৪২) ও মাসুক (৩৫)সহ অনেকেই জানান, সাত্তারের কাছে গিয়ে আগাছা মারার বিষ চাইলে সে অন্য বিষ দেওয়ায় রাশেদের ক্ষেত মরে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর বিক্রেতা আব্দুস সাত্তার ক্ষতিপূরণ দেবে বলে আমাদেরও কথা দিয়েছিল। এখন সে অস্বীকার করছে।
ক্ষতিগ্রস্থ রাশেদ জানান, ব্যক্তিগতভাবে আমি এই একুশ কাঠা (১০৫ শতক) জমি আবাদ করে আমার সংসারের খরচ চালাই। পুরো জমিটাই সাত্তারের ভুল বিষে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমি কি করে চলব? আমার আর কোন পেশা নেই।
কীটনাশক ব্যবসায়ী সাব্বির এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুস সাত্তার জানান, আমার কাছে যে বিষ চেয়েছে আমি তাই দিয়েছি। এখন ধানগাছ নষ্ট হয়ে গেলে আমার কিছু করার নেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হযরত আলী ও চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, অভিযোগ শোনার পর আমরা কীটনাশক বিক্রেতা সাত্তারকে ক্ষতিগ্রস্থ রাশেদের সাথে মিমাংসার জন্য বলেছিলাম। প্রথমে মিমাংসায় বসার কথা নিজে থেকে জানালেও এখন সাত্তার বসতে চাইছে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, কৃষক রাশেদুজ্জামান কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ ছাড়া নিজের ব্যবস্থাপনায় ভুল কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে রিকোভারি করার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। তিনি আরো জানান, উপজেলার প্রতিটি ব্লকে আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের পরামর্শ নিয়ে যাতে কৃষকরা তাদের ধান ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করে।