রোদশি এবার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বাবা পুলিশ অফিসার মো. আব্দুলাহ আল মামুন শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। গতকাল সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) ছিল ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা ‘বিশ্ব ভালোবাসা’ দিবস। পুলিশের চাকুরির কারণে এমনিতেই রোদশি বাবাকে খুব বেশী কাছে পায়না। তার উপর ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিন শেরপুর পৌর সভার নির্বাচনের ডিউটিতে ভোর থেকেই বাসা থেকে বের হন ওসি মামুন। এসময় রোদেলা ও তার অন্য ভাই বোনরা ঘুমের মধ্যেই ছিল। তাই ভালোবাসা দিবসে বাবার কপালে ভালোবাসার চুমু একে দিতে পারেনি রোদেলা। তাই দিন ভর অপেক্ষার প্রহর গুনেছে কখন বাবা বাসায় ফিরবে। বাবাকে ভালোবাসা দিবসের ‘উইশ’ করবে। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা। আর সন্ধ্যা গড়িয়ে মধ্যরাত পেরিয়ে যায়। বাবা বাসায় ফিরছেনা। মোবাইলে শত চেষ্টা করেও বাবাকে বাসায় ফিরিয়ে আনতে পারেনি। কেবল মাত্র দেশ ও জনগনের স্বার্থে সরকারী কাজে ব্যস্ত থাকায়।
অবশেষে রোদশির চোখে যখন রাজ্যের ঘুম এসে হানা দেয় তখন সে শুয়ে পড়ে। তার আগে ভালোবাসা দিবসের ভালোবাসা জানাতে বাবাকে নিজের হাতের একটি চিঠি লিখেন রোদেলা। বাবা যখনই বাসায় আসবে তখনই যেন চিঠিটা পড়ে তার অপেক্ষার কথা, ভালোবাসার কথা জানাতে পারে। কারণ রাত শেষ হলেই তো ভালোবাসার দিবস শেষ।
ডিউটি শেষে ওসি মামুন বাসায় ফিরে ভোর সাড়ে ৫ টায়। ঘরে ঢুকেই চোখে পড়ে টেবিলের উপর কাঁচা হাতের লেখা একটি চিঠির খাম। খামের উপর লেখা ছিলো, ‘বাবা চিঠিটা পড়ো প্লিজ- রোদশি’ লেখাটি দেখে বোঝার বাকী রইলো না এটা মামনি রোদশির হাতের লেখা চিঠি। চিঠিটি পড়ে ওসি মামুন ক্ষনিকের জন্য আবেগ আপ্লুত হয়ে ঘুমের মধ্যেই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আদর করে। এরপর ওসি মামুন তার ফেইসবুক ওয়ালে পোষ্ট করলে ঘন্টা খানিকের মধ্যেই তার সেই পোষ্টটি ভাইরাল হয়ে যায়, বাবা-মেয়ের ভালোবাসার নিদর্শন দেখে। নানা জনে নানা কমেন্ট করে মেয়েকে ভালোবাসা জানায়।
চিঠিতে লিখা ছিল, বাবা আজকে নির্বাচনে তুমি ছিলে অনেকটা টায়ার্ড। তুমি তাও যে চিঠিটা দেখছ এটা দেখে আমি খুব খুশি হলাম। তোমার মতো বাবা পেয়ে আমি নিজেকে গর্ব করি। আমি জানি তুমি আমাকে অনেক অনেক ভালোবাসো। কিন্তু আমি তোমাকে তার চেয়ে ১০০ গুন ভালোবাসি। আমি জানি আমরা তিন জন মানে আমি রাইজা ও রোহান তোমাদের দুই জনের কলিজার টুকরা। তোমরা দু’জন আমার ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’। আমি তোমার আর আম্মুর আশা পূরণ করবো। ‘আই লাভ ইউ’ বাবা। আমি তোমার মতো সৎ একজন ডাক্তার হবো এটা আমার চ্যালেঞ্জ। ইতি, তোমার আদরের মেয়ে বড় ‘রোদ’।