বাংলাদেশ সফরে আসা এমি মার্তিনেজের সঙ্গে সকাল নিজেদের কার্যালয়ে আড্ডা দিয়েছেন এই সফরের স্পন্সর ফান্ডেডনেক্সট ভেঞ্চারের সিইও সৈয়দ আব্দুল্লাহ জায়েদ এবং চীফ স্ট্র্যাটেজিক অফিসার সৈয়দ আব্দুল্লাহ গালিব। সেখানকার কথোপকথন পরে মিডিয়ার জন্য পাঠিয়েছেন তারা। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো…
বাংলাদেশে এসে কেমন লাগছে
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ: ভাল লাগছে। যাত্রাপথটা খুব দীর্ঘ ছিল। শুরু হয়েছে আর্জেন্টিনা থেকে। তবে এখানে এসে অনেক মানুষকে দেখে ভাল লাগছে। আমি জানি এই দেশের মানুষ বিশ্বকাপে আমাদেরকে অনেক সমর্থন দিয়েছে। আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের মুহূর্ত যে আমি এখানে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরেছি।
বাংলাদেশকে নিয়ে আপনার কি ভাবনা, প্রথম এই দেশের নাম কোথায় জানেন আর আপনার প্রতিক্রিয়া কি ছিল?
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ: আমি বাংলাদেশের নাম জানতে পারি কোপা আমেরিকা জয়ের পর। তখনই শুনেছি যে বাংলাদেশ নামের একটা দেশ আছে, যেখানকার মানুষ আর্জেন্টিনার পাগল ভক্ত। কোপা আমেরিকা জয়ের পর আমাদের দলের বিপনণ বিভাগের সঙ্গে জড়িত একজন প্রথম আমাকে বলে আর্জেন্টিনার অনেক বড় ভক্তকূল আছে বাংলাদেশে। এরপরই আমি ইন্টারনেটে বাংলাদেশ সম্পর্কে খোঁজ করি। পরে আবার আমি বাংলাদেশের নাম শুনি বিশ্বকাপের সময়। এত মানুষ আমাদের জন্য পাগল, এত ভক্ত আমাদের! ওরা সবাই আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে, মুখে পতাকা এঁকে, হাতে বিশাল পতাকা উঁচিয়ে একসঙ্গে বসে বিগস্ক্রিনে আর্জেন্টিনার খেলা দেখছে! হা ঈশ্বর! এমনটা তো আর্জেন্টিনাতেও দেখি না। আমাদের কাছে এই ভালবাসাটা দূর্লভ মনে হয়েছে, একেবারে হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
ভবিষ্যতে কি আবার বাংলাদেশে খেলতে আসতে দেখা যাবে? বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে চান
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ: নিঃসন্দেহে, আমি চাইব আবারও বাংলাদেশে আসতে। সেজন্য আপনাদের চিকি তাপিয়া, ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপ করতে হবে।
নিজের দেশের বাইরে কোটি কোটি ভক্ত; এই ব্যপারটা কেমন লাগে আপনার কাছে? কি মনে হয় এখানকার মানুষ আপনাকে নিজের দেশের মত করেই ভালবাসে?
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ: সেই ভালবাসার প্রতিদান দিতেই আমি এসেছি। আমি এখানে এসেছি কারণ আমি আমার সমর্থকদের ভালবাসি। আমাদের বিশ্বকাপে কঠিন সময় গেছে। আমরা সৌদি আরবের কাছে হেরে গিয়েছিলাম। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ থেকে সবগুলো ম্যাচই ছিল আমাদের জন্য নকআউট। সমীকরণটাই এমন হয়ে যাচ্ছিল। অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস,, ফ্রান্স। অনেক স্নায়ুর চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমি নিশ্চিত আর্জেন্টিনার মানুষ যতটা আমাদের কথা ভেবেছে এখানকার মানুষও ততটাই আমাদের নিয়ে চিন্তিত ছিল।
কঠিন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেয়ার অভ্যাসটা কিভাবে এল
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ: এই অভ্যাসটা আমার মধ্যে গড়ে ওঠে ১২ বছর বয়স থেকেই, যখন সিদ্ধান্ত নেই আমি পেশাদার ফুটবলার হব। আমি আমার পরিবারকে সাহায্য করব আর্থিকভাবে। আমি ১৬-১৭ বছর বয়সেই দেশ ছাড়ি, ফুটবলার হবার জন্য। সেই থেকে কিভাবে আরো ভাল খেলোয়াড় হওয়া যায়, কিভাবে আরও ভাল মানুষ হওয়া যায় সেই চেস্টা করে আসছি। আমি সবসময়ই পা মাটিতে রেখেছে। বিশ্বকাপ জয়ের পর আমি সোজা অ্যাস্টন ভিলাতেই গিয়েছি। আমার চেয়ে প্রতিভাবান অনেকেই আছে কিন্তু আমি পরিশ্রমে বিশ্বাস করি আর আমি রোজ পরিশ্রম করি।
ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্পটা কেমন ছিল?
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ: খুব অল্প বয়সেই শুরু, যেটা বললাম। প্রথমে তো চিন্তা ছিল আর্জেন্টিনার ক্লাব ইন্দিপেন্দিয়েন্তের হয়ে খেলব, এতটুকুই। অল্প বয়সেই খেলা শুরু করলাম, পরিবারকে সাহায্য করতে হবে। ১৬-১৭ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে চলে গেলাম প্রস্তাব পেয়ে। প্রতি মৌসুমের শুরুতে নতুন চুক্তি হয় ক্লাবের সঙ্গে। তাই প্রতিবছর আমার লক্ষ্য ছিল আগের চেয়ে ভাল করা যাতে আগের চেয়ে ভাল একটা চুক্তিতে আসা যায়, এটাই ছিল লক্ষ্য। এভাবেই আস্তে আস্তে চুক্তিতে অংকটাও বাড়তে লাগল। আমি সবসময় বলি আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হচ্ছে পরিবার। তাদের দিকে তাকাও, দেখ তারা দিনের পর দিন নিরলসভাবে কিভাবে কাজ করে যায়। আমার কোন সুপার হিরো বা আইডল ছিল না। আমি সবসময় আমার বাবা-মাকেই দেখেছি আদর্শ হিসেবে, আমার ভাইকে। এখনো। আমি এখনো তাদেরকেই সবার উপরে স্থান দেই।
বিশ্বকাপ জয়ের অনুভূতি
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ: আমি আসলে জন্মের পর আর্জেন্টিনাকে কখনো বিশ্বকাপ জিততে দেখিনি। তাই বিশ্বকাপ জয়ের অনুভূতিটা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বুঝতে পারি দেশে ফিরে আসার পর। যখন দেখি রাস্তায় লাখো মানুষ সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ওরা কাঁদছে। তখন মনে হয়ে যে অবশেষে তাহলে দেশের জন্য কিছু করতে পারলাম।
প্রস্তুতি নেন কিভাবে?
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ: আমি একটা লক্ষ্য ঠিক করি আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। আমি জিম করি, ইয়োগা করি, ঠিক খাবারটা খাই, চোটমুক্ত থাকার চেষ্টা করি। চেষ্টা করি প্রতিটা সপ্তাহ শেষে আমি যেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকি।