দেশবরেণ্য কৃষিবিদ ও বরেণ্য রাজনীতিবিদ, নকলা-নালিতাবাড়ী মানুষের প্রাণ পুরুষ, মাটি ও মানুষের নেতা বৃহত্তর ময়মনসিংহের সিংহ পুরুষ খ্যাত আলহাজ্ব কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা আর নেই ( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
রোববার (২১ নভেম্বর) দিবাগত রাত ২.৪৫ মিনিটের সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফসাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ অভিভাবকের জীবনাবসান ঘটে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বরেণ্য এ রাজনীতিবিদের প্রথম নামাজে জানাযা রাজধানীর মোহাম্মদপুর তাঁর নিজ বাসভবন এলাকায় সকাল সাড়ে সাতটার দিকে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ-এ (কেআইবি) তাঁর মরদেহে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সকাল সাড়ে নয়টায় দ্বিতীয় নামাজে জানাযা হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহে বাদ যোহর তৃতীয় এবং সবশেষ তাঁর জন্মভূমি নালিতাবাড়ীতে বাদ মাগরিব চতূর্থ নামাজে জানাযা হওয়ার কথা রয়েছে।
ক্ষণজন্মা বদিউজ্জামান বাদশা ১৯৫৮ সালের ৫ জানুয়ারি নালিতাবাড়ীর ছিটপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর অপর দুই ভাই আরও আগেই মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে একমাত্র বোন জীবিত রয়েছেন।
রাজনীতির উজ্জল নক্ষত্র বদিউজ্জামান বাদশা বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি, নালিতাবাড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন এর কার্যনির্বাহী সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথ্য ও গবেষণা কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি’র সদস্য ছিলেন। তিনি ছিলেন অনন্য সাধারণ সংগঠক, আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ, দুঃসময়ের সাহসী ও গণমুখী চরিত্রের রাজনৈতিক কর্মী এবং বহুমুখী প্রতিভাধারী একজন বহু ভাষাজ্ঞান সম্পন্ন প্রজ্ঞাবান মানুষ।
ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন মাস আগে তিনি অসুস্থ হলে গত ২১ সেপ্টেম্বর তিনি রাজধানীর আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এরপর তরল পানিবাহিত জন্ডিস, ফুসফুসে সংক্রমণ, বডি ইনসুলিন ম্যানেজম্যান্ট, শ্বাসকষ্ট ও অস্বাভাবিক ওজন কমে যাওয়াসহ নানা সমস্যার একপর্যায়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এমতাবস্থায় গত ২৩ অক্টোবর তাকে ভারতের চেন্নাইয়ের এপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শারিরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার শরীরে ক্যান্সার শনাক্ত করেন চিকিৎসকগণ। চিকিৎসকগণের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় বছর খানেক আগে তার অগ্নাশয়ে সৃষ্ট অসংখ্য ক্ষত থেকে ক্যান্সার ফুসফুস, লিভার ও শরীরের নিচের দিকে হাড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তা ব্রেনের দিকে ছড়াতে থাকে। চিকিৎসকরা জানান, ক্যান্সারের শেষ ধাপে (চতূর্থ স্টেজ) চলে আসায় বাদশার আর বেঁেচ থাকার সম্ভাবনা নেই। পরে সংকটাপন্ন অবস্থায় ২১ দিনের একটি ব্যবস্থাপত্র দেন চিকিৎসকগণ। ডাক্তারের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র নিয়ে গত ৯ নভেম্বর এয়ার এ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় এবং ওই দিনই রাজধানীর পন্থপথে বিআরবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে প্রথমে বঙ্গবন্থু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি) হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে শেষ দুইদিন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। অবশেষে রোববার দিবাগত রাত ২.৪৫ মিনিটের দিকে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পারি জমান।
ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, চেন্নাই থেকে ফেরার মাত্র তিন দিন আগে তিনি তাঁর সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন এবং কান্নায় ভেঙে পড়েন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যতক্ষণ তিনি চেতন ছিলেন ততক্ষণ বাচ্চাদের মতো অঝোড়ে কাঁদতেন, সবার কাছে ক্ষমা ও দোয়া চাইতেন।